নুরুন নবী মন্ডল

নুরুন নবী মন্ডল। ১৩ বছর চাকরি থাকতেই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য অবসরে যান। নৌকা পেতে হয়ে উঠেন মরিয়া। গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন তিনি। তবে লবিংয়ের জোরে ইউনিয়নের প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও তিনবারের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুর রহমানকে টপকিয়ে পেয়েও যান নৌকা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে দুই হাজারেরও বেশি ভোটে পরাজিত হয়েছেন। 

জানা গেছে, নুরুন নবী মন্ডল পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের ময়দানদিঘী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি। ২০১১ সালে প্রথম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ওইবার যাচাই-বাছাইয়ে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। পরে ২০১৬ সালে তিনি আবারও চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুর রহমানের বিপক্ষে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন। তবে ওই দুইবার তিনি রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ায় চাকরি ছাড়তে হয়নি। পরবর্তীতে বিদ্যালয়টি সরকারি হয়। ফলে এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাকরি তার বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই নির্বাচন করতে তিনি এক বছর আগে চাকরি ছেড়ে দেন।

এরপর থেকে তিনি ইউনিয়নে নিয়মিত গণসংযোগ করতে থাকেন। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি এলাকায় সকলের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। এতে দলীয় সমর্থন না পেলেও তিনি নির্বাচন করবেন বলে এলাকায় প্রচার-প্রচারণাও চালান। এমনকি তিনি নিজে নির্বাচনে যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়লে নিজের দুই স্ত্রীকে দিয়ে নির্বাচন করাবেন বলে মনোনয়নপত্র দাখিল করিয়ে সমালোচিত হন। 

এই অবস্থায় তিনি গত মাসে নৌকা পেয়ে নির্বাচনে নিশ্চিত চেয়ারম্যান হবেন এমনটা ভেবেছিলেন। তবে খুব দ্রুত সময়ে তার জনপ্রিয়তায় ধস নামে। মুহূর্তেই বিদ্রোহী প্রার্থী মনোয়ার খান মিঠুর পক্ষে জনমত সৃষ্টি হয়। এতে নুরুন নবী মন্ডলের নৌকা প্রতীক পাওয়ায় কাল হয় বলে অনেকে মনে করেন। 

এর আগে নুরুন নবী মন্ডল প্রার্থিতার বিষয়ে বলেছিলেন, ১৩ বছর আগে চাকরি ছেড়ে দেওয়ায় তিনি প্রায় ১ কোটি ২১ লাখ টাকা পাবেন না। এরপরও জনগণের চাওয়া পাওয়ার কারণে তিনি চাকরি ছেড়ে প্রার্থী হন। জনগণের ভালবাসায় বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আশা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।

রোববার (২৬ ডিসেম্বর) নির্বাচনে মনোয়ার খান মিঠু (ঘোড়া মার্কা) ৮ হাজার ৯৫১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। নুরুন্নবী মন্ডল পান ৬ হাজার ৯২৭ ভোট। রাতে উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে বেসরকারিভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রুখশানা পারভিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে চতুর্থ ধাপে পাবনার ভাঙ্গুড়ার চার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির ঘটনা ঘটেনি। চার ইউপির ২টিতে নৌকা  এবং অন্য দুইটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ভোটকেন্দ্রে পুলিশ ও আনসার মোতায়েনের পাশাপাশি বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশের মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং, স্ট্যান্ডবাই ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছিল।

রাকিব হাসনাত/এসপি