রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার দুদিন পর ভোটকেন্দ্রের বাইরে পরিত্যক্ত কয়েকটি ব্যালেট পেপার উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকরা।

ভোটে কারচুপি করে পরাজিত করা হয়েছে, এমন অভিযোগে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজিজুল হক সরকারের কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষোভ করেছেন।  

মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের মোস্তফাপুর গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে। এর মধ্যে চারটি ব্যালট পেপার উদ্ধার করে পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আয়শা বেগম (৩৭) ও তার দশম শ্রেণিপড়ুয়া ছেলে রিয়াজুল হককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।

গত রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মাত্র ৪৩ ভোটের ব্যবধানে নৌকার প্রার্থী আজিজুল হক সরকারকে পরাজিত করে দামোদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আবু বক্কর সিদ্দিক। মোটরসাইকেল প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৮ হাজার ৯১ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আজিজুল হক সরকার ৮ হাজার ৪৮ ভোট পেয়েছেন। নির্বাচনের দিন রাতে ঘোষিত ফলাফল বাতিলের দাবিতে ওই ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় আজিজুলের কর্মী-সমর্থেকরা বিক্ষোভ করেন।

এদিকে মঙ্গলবার ব্যালেট পেপার উদ্ধারের ঘটনার পর আজিজুল হকের বাড়ির সামনে হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক জড়ো হন। তাদের দাবি, ভোট কারচুপির মাধ্যমে নৌকার প্রার্থীকে কৌশলে পরাজিত করা হয়েছে। খবর পেয়ে প্রথমে বদরগঞ্জ থানার সহকারী উপপরির্দশক (এএসআই) সাইদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গেলে তাকে বিক্ষুব্ধ জনতা আটক করে রাখেন। পরে বদরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজেই ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

ব্যালট পেপার কুড়িয়ে পাওয়া পুলিশের কাছে আটক রিয়াজুল হকের দাবি, সোমবার বাড়ির পাশের ভোটকেন্দ্রের কাছে ছাগলকে ঘাস খাওয়াতে গিয়ে সে চারটি পরিত্যক্ত ব্যালট পেপার পায়। এগুলো সে বাড়িতে নিয়ে আসে। পরে খবর পেয়ে লোকজন তাকে ও তার মা আয়শা বেগমকে ধরে চেয়ারম্যানের কাছে নিয়ে যান তার কর্মীরা। তবে কারা কীভাবে ব্যালট পেপার সেখানে রেখেছে বা ফেলে গেছে, তা জানাতে পারেনি ওই কিশোর।

এ বিষয়ে পরাজিত প্রার্থী আজিজুল হক সরকার বলেন, পরিকল্পিতভাবে তাকে ভোটে পরাজিত করা হয়েছে। যার প্রমাণ মিলেছে ভোট শেষে বাইরে পাওয়া ব্যালট পেপার। এর আগে ওই কেন্দ্রের বাইরে বহু ব্যালট পেপার পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। পুনরায় ভোট গণনাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে তিনি প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।

বদরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান বলেন, চারটি ব্যালট পেপার উদ্ধার করেছি। অনেকেই বলছে কিছু ব্যালট পেপার পোড়ানো হয়েছে। তবে এর কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ আমরা এখনো পাইনি। সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা সহকারী রিটার্নিং অফিসার আজিজার রহমান বসুনিয়া বলেন, রোববার শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে ১০টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করা হয়েছে। কীভাবে বাইরে ব্যালট পেপার পড়ে ছিল, তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে কোনো ভোটার হয়তো কেন্দ্রের ভেতর থেকে ব্যালট পেপার বাক্সে না ফেলে বাইরে নিয়ে গেছে। পরে হয়তো কোনো এক সময় ওই ব্যালট পেপার বাইরে ফেলে দিয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, বদরগঞ্জ উপজেলার ১০ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৩টিতে আওয়ামী লীগ এবং ৭টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। একই দিনে গঙ্গাচড়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়নেও ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ৪টিতে আওয়ামী লীগ, ৩টিতে জাতীয় পার্টি ও একটিতে বিএনপির স্বতন্ত্র এবং আরেকটিতে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেছেন।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এনএ