এক প্রতিবেশীর বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে তিন গারো কিশোরী বাড়ি ফিরছিল। তিন কিশোরীর দুজন সংঘবদ্ধ দলটির নির্যাতনের শিকার হয়। ঘটনাটি গত ২৭ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার। এ ঘটনায় ১০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। তবে সপ্তাহ পার হলেও কোনো অভিযুক্তই গ্রেফতার হয়নি।

জানা গেছে, হালুয়াঘাটের গাজীরভিটা ইউনিয়নের সীমান্তের কাছে বসবাস করে গারো পরিবার। ২৭ ডিসেম্বর এক প্রতিবেশী বিয়ের অনুষ্ঠানে যায় ১৬ বছরের দুই কিশোরী ও দশ বছর বয়সী এক শিশু। ওই দুই কিশোরী স্থানীয় স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী।

গারো রীতিতে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাত ২টার দিকে বাড়ি ফিরছিল দুই কিশোরী ও শিশু। কিন্তু পূর্ব থেকেই ওত পেতে থাকে ধর্ষক দল। দলটির নেতৃত্ব দেয় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের প্রাক্তন সদস্য কচুয়াকুড়া গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে সোলায়মান হোসেন রিয়াদ (২২)। রিয়াদকে দেখে ভয় পেয়ে যায় কিশোরীরা।

দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে সঙ্গীদের নিয়ে দলটি দুই কিশোরীকে ধরে ফেলে। এর পর অন্তত সাতজন দুই কিশোরীকে ধর্ষণ করে। ঘটনা কাউকে জানালে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয় দুই কিশোরীকে। নির্যাতিতা দুই কিশোরী পরিবারকে নির্যাতনের ঘটনা জানালে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে পরিবার। এ ধরনের ঘটনা এর আগে এলাকায় কখনও ঘটেনি।

আরও জানা গেছে, বাঙালি ও গারোরা মিলেমিশে বসবাস করলেও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাটি প্রথম হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারছিল না। ঘটনাটির খবর পেয়ে ২৯ ডিসেম্বর হালুয়াঘাট থানার ওসির নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরে ৩০ ডিসেম্বর হালুয়াঘাট থানায় একটি মামলা করেন নির্যাতিতা এক কিশোরীর বাবা।

রিয়াদ ছাড়াও মামলায় অন্য অভিযুক্তরা হলেন- কচুয়াকুড়া গ্রামের শহীদ মিয়ার ছেলে শরিফ (২০), আবদুল হামিদের ছেলে এজাহার হোসেন (২০), কাটাবাড়ি গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে রমজান আলী (২১), তালেব হোসেনের ছেলে কাউছার (২১), দুলাল মিয়ার ছেলে আছাদুল (১৯) মাহতাব উদ্দিনের ছেলে শরিফুল ইসলাম (২১), আবদুল মতিনের ছেলে মিজান (২২), মফিজুল ইসলামের ছেলে রুকন (২১) ও বকুল মিয়ার ছেলে মামুন (২০)।

ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ও তাদের পরিবারের লোকজন এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। পুলিশ রেকর্ড অনুযায়ী, সোলায়মান হোসেন রিয়াদ গত ৯ অক্টোবর মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়েছিল। বর্তমানে জামিনে আছে।

গাজীরভিটা ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, গত এক বছর আগেও এক গারো নারীকে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় সালিশে বিচার করে সতর্ক করা হয় দলটিকে। সতর্ক করেও এদের থামানো যায়নি। দলটির নেতৃত্ব দেয় রিয়াদ।

নির্যাতিতা এক কিশোরী জানায়, বিয়েবাড়িতে নাচ শেষে তারা বাড়ি ফিরছিলেন। বিয়েবাড়ি থেকে নিজেদের বাড়ির রাস্তার মাঝামাঝি আসতেই তারা রিয়াদকে রাস্তায় পান। ভয়ে সে সময় দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেও রেহাই পাইনি।

নির্যাতিতা অপর কিশোরী জানান, রিয়াদ এর আগেও মেয়েদের উত্ত্যক্ত করলেও তাদের বিরক্ত করেনি আগে। তবে সেই রাতে নিজের দলবল নিয়ে তাদের সর্বনাশ করে। তাদের সঙ্গে ৬ জন অত্যাচার চালায়। তারা ঘটনার সর্ব্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।

ওই এলাকার ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ মার্টিন চিসাম বলেন, ঘটনার পর তারা আতঙ্কে আছেন। আসামিরা গ্রেফতার হচ্ছে না। জড়িতদের কঠোর শাস্তি না হলে এ ধরনের ঘটনা আবারও ঘটতে পারে। 

বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংসদের (বাগাছাস) হালুয়াঘাটের প্রাক্তন সভাপতি জেমস জিদিল রেমা বলেন, এ ধরনের ঘটনা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী গ্রামে এর আগে ঘটেনি। নির্যাতনের পর হত্যার হুমকি দেওয়ায় বিষয়টি জানাজানি হয়নি। তারা ধর্ষকদের কঠোর শাস্তি দাবি করেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামি গ্রেফতার না হলে তারা কঠোর কর্মসূচি দেবেন।

সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে সোমবার (০৩ জানুয়ারি) বিকেলে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। হালুয়াঘাটের সীমান্ত সড়কে মিছিল শেষে কাজলের মোড় এলাকায় মানবনন্ধনে দাঁড়ান বিক্ষুব্ধ মানুষ। আদিবাসীদের সঙ্গে অংশ নেন বাঙালিরাও।

হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীনুজ্জামান খান বলেন, খবর পেয়ে নির্যাতিতা পরিবারকে থানায় নিয়ে এসে মামলা নেওয়া হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে সর্ব্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।

উবায়দুল হক/এমএসআর