শেরপুরে শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেন উদয়ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুল হক মনি

‘দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলাম আমি। মা-বাবা, ভাই-বোন নিয়ে ভাঙা একটি বাড়িতে থাকতাম। শূন্য পকেটে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম। এখন কোটি টাকার গাড়িতে চড়ি। লাখ টাকার বাড়িতে থাকি।’

শনিবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের তালুকপাড়া গ্রামে শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণকালে এসব কথা বলেন উদয়ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুল হক মনি।

তিনি আরও বলেন, একদিন জেদ করে ২০০১ সালে বাড়ির কাউকে না বলে বেরিয়েছিলাম কাজের খোঁজে। ইচ্ছা ছিল প্রতিষ্ঠিত হলে তবেই বাড়ি ফিরব। এরপর চলে যাই ঢাকায়। তখন এমনও সময় গেছে টানা তিন দিন শুধু পানি খেয়ে থেকেছি। সে সময় টানা চার বছর পরিবারের কারও সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ ছিল না। আজ আমি প্রতিষ্ঠিত। নিজ গ্রামে ফিরেছি।  দেশের অন্যতম ডেভেলপার কোম্পানি উদয়ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়েছি। আমার কোম্পানিতে শত শত মানুষ কাজ করে। আমি ঢাকার উত্তরা, বারিধারা, গুলশানসহ বিভিন্ন স্থানে বহুতল বিশিষ্ট ভবন নির্মাণের কাজ করি। বর্তমানে আমি যা হয়েছি বা যে সম্পদ গড়েছি সব কিছুর জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি শুকরিয়া জানাই। 

মাহমুদুল হক মনি বলেন, গত বছর করোনাকালে আমি যেহেতু ঢাকা থেকে বের হতে পারিনি,  সেজন্য ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সাধ্যমতো খাবার সামগী নিয়ে  কর্মহীনদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। এখন নিজ এলাকা শেরপুরবাসীর জন্য কিছু করতে চাই। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই শীতে সদর উপজেলার চরশেরপুর, লছমনপুর, চরমোচারিয়া, কামারেরচর, চরপক্ষিমারী ইউনিয়নের ৩ হাজার শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করবো। এছাড়াও ঘরহীন ১০০টি পরিবারকে ঘর ও ১০০ জনকে টিউবওয়েল প্রদান করব। 

তিনি বলেন, আমরা শহরে অনেক সুন্দর কারুকাজ সম্বলিত মসজিদ দেখি। কিন্তু গ্রামের মানুষ সেসব মসজিদে নামাজ আদায়ের সুযোগ পান না। তাই আমার নিজ গ্রাম তালুকপাড়ায় আমার নিজস্ব অর্থায়নে এক কোটি টাকা বাজেটে একটি মসজিদ নির্মাণ করছি। আশা করি এই বছরেই মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ হবে। 

উপকারভোগী রহিম মিয়া বলেন, আমরা গরিব মানুষ। তাই টাকা খরচ করে লেপ বানাতে পারি না। আজকে মনি আমাগো একটা করে কম্বল দিল। যেটা দিয়ে আমরা রাতের শীত থেকে অনেকটা রেহায় পাব।

মোর্শেদা বেগম বলেন, গত কয়েকদিন থেকে অনেক শীত। পাতলা একটা কাঁথা গায়ে দিয়ে থাকি। কম্বলটা পেয়ে আমার অনেক উপকার হলো। এখন আর রাতে শীতে কষ্ট অইবো না।

কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উদয়ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের উদ্দেশে শেরপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মানিক দত্ত বলেন, আপনি (মাহমুদুল হক মনি) শেরপুরের সন্তান। শেরপুর জেলাবাসীর জন্য আগামী দিনে আরও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন। আমরা সেই প্রত্যাশা করি।

শেরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শরিফুর রহমান বলেন, শেরপুর জেলা অন্যান্য জেলা থেকে একটু পিছিয়ে আছে। আজ আপনি (মাহমুদুল হক মনি) ৫শ অসহায় শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেছেন। এই কম্বলগুলো দিয়ে তারা শীত নিবারণ করতে পারবেন। আমরা আপনাকে অনুরোধ করব আগামী দিনগুলোতেও শেরপুরবাসীর জন্য কাজ করে যাবেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উদয়ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুল হক মনির বাবা ফয়েজ উদ্দিন, সিনিয়র সাংবাদিক সঞ্জীব চন্দ্র বিল্টু, আসাদুজ্জামান মোরাদ, রফিক মজিদ, আদিল মাহমুদ উজ্জলসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও উপকারভোগীরা উপস্থিত ছিলেন।

জাহিদুল খান সৌরভ/আরএআর