লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় পুলিশ হেফাজতে থাকা নিহত হিমাংশু (৩৫) বর্মণের বাবার কাছে এক লাখ টাকা পুলিশ দাবি করেছিল বলে অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যরা। টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাকে হত্যা করেছেন বলে দাবি করেন হিমাংশুর বাবা বিশ্বেশ্বর বর্মণ। একই দাবি জানিয়েছেন, বিচার না পেলে থানা ঘোরাও করবেন এলাকাবাসীরা।

স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) সকালে হিমাংশুর স্ত্রী সাবিত্রী রানী ওরফে সবিতা রানী নিজ বাড়িতে খুন হয়েছেন বলে জানতে পারেন এলাকাবাসী। খবর পেয়ে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে হিমাংশুকে তার স্ত্রীর মরদেহের পাশে দেখতে পান। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাতীবান্ধা থানায় খবর দিলে ওসি এরশাদুল আলমসহ একদল পুলিশ সেখানে উপস্থিত হন। পরে মরদেহসহ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হিমাংশু ও তার বড় মেয়ে পিংকীকে (১৩) থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। কিন্তু হিমাংশু থানায় গিয়ে লাশ হবেন, তা মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসী।

এদিকে পুলিশের দাবি, হিমাংশু আত্মহত্যা করেছেন! কিন্তু গ্রামবাসীর প্রশ্ন, হিমাংশু যদি আত্মহত্যা কিংবা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেন, তাহলে বাড়িতেই থাকতেই করলেন না কেন? তাদের আরও দাবি, হিমাংশু আত্মহত্যা করেন নাই, পুলিশ নির্যাতন করে তাকে হত্যা করেছে। সুষ্ঠু তদন্ত হলে সব সত্য ঘটনা প্রকাশ পাবে বলে ধারণা তাদের। তবে শুধু এলাকাবাসী নয়, পরিবারের লোকজনও দাবি করেছেন, হিমাংশুকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।

নিহতের বাবা বিশ্বেশ্বর বর্মণের ভাষ্যমতে, শুক্রবার দুপুরে ছেলেকে থানায় দেখতে গেলে পুলিশ তার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে পারলে ছেলে ও নাতনি পিংকীকে ছেড়ে দেওয়া হবে নতুবা তাদের জেলে পাঠানো হবে বলে উল্লেখ করেন বিশ্বেশ্বর বর্মণ।

তিনি আরও অভিযোগ করে জানান, থানা থেকে ফেরার আগে ওই দিন বেলা দেড়টার দিকে হিমাংশুর সঙ্গে সর্বশেষ দেখা করেন বাবা বিশ্বেশ্বর বর্মণ। ওই সময় হিমাংশু তার বাবাকে বলেন, বাবা, পুলিশ আমার কাছে এক লাখ টাকা চেয়েছে। টাকা দিলে ছেড়ে দিবে, না দিলে আমাকে ও আমার মেয়েকে জেলে পাঠিয়ে দিবে’ বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন বিশ্বেশ্বর বর্মণ।

এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কোনো তথ্য না দিয়ে তারা গতকাল রাতে একটি প্রেস রিলিজ দিয়েছে।

তবে টাকা চাওয়ার বিষয়টা ভিত্তিহীন দাবি করে হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল আলম বলেন, হিমাংশু থানার কক্ষে থাকা ওয়াই-ফাইয়ের তার গলায় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. হিরণ্ময় বর্মণ বলেন, শুক্রবার বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে পুলিশ হিমাংশুকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসে। তার গলায় একটি দাগ রয়েছে।

নিয়াজ আহমেদ সিপন/এনএ