একমাত্র ছেলের হত্যার বিচার দেখে মরতে চাই
ময়মনসিংহে কলেজ ছাত্র মোতাহসিম বিল্লাহ শাকিলকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি জানিয়েছে তার পরিবার।
বুধবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে মৃত্যুর আগে একমাত্র সন্তান হত্যার বিচার দেখার আকুতি জানিয়েছেন নিহতের বাবা-মা।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, নগরীর শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজে ২০১৬ সালে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন মোতাহসিম বিল্লাহ শাকিল। ফুলবাড়িয়া উপজেলার বাসিন্দা এমদাদুল হক ও উম্মে কুলসুম জাহানারা বেগম দম্পতির একমাত্র সন্তানকে নিয়ে নগরীর আকুয়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন তারা। ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্তের ঘটনার জেরে কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থী সংঘবদ্ধ হয়ে শাকিলকে হত্যা করে।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা এমদাদুল হক বাদী হয়ে ওই বছরের ২৯ জানুয়ারি কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে ওই বছরের ৭ আগস্ট আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়। চার্জশিটে অভিযুক্তরা হলো- সিফাত ইয়াসিন তুবা (১৯), ফাহিম শাহরিয়ার প্রদীপ (১৮), আদিদ আহমেদ শাওন (১৮), মাহমুদুল হাসান নাদিম (১৮), নাইমার রহমান ধ্রুব (১৯)।
তবে আসামিদের প্রকৃত বয়স কম এমন তথ্য দিয়ে উচ্চ আদালতে একটি আবেদন করা হয়। আসামিদের পক্ষের মোকদ্দমার কারণে দীর্ঘসূত্রিতা দেখা দেয় মামলার বিচার শুরু হতে। এ কারণে বিচার নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন নিহতের বাবা-মা ও স্বজনরা।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নিহতের মা উম্মে কুলসুম জাহানারা বেগম বলেন, আমার একমাত্র ছেলে কোচিং কাস শেষে বের হওয়ার পর আসামিরা পরিকল্পিতভাবেই তার ওপর আক্রমণ চালিয়ে হত্যা করে। পুলিশ ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই ৩ জনকে গ্রেফতার করে। কিন্তু খুনিদের শিশু দেখিয়ে মামলার দীর্ঘসূত্রিতা করা হয়েছে। কাগজপত্র নকল করা যায় কিন্তু শারীরিক গঠন লুকানো যায় না। খুনিরা কেমন শিশু কারো বুঝার বাকি নাই। নিম্ন আদালতে বাদী পক্ষের মামলার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আদেশ দেন। এই আদেশের মূলে আসামিরা হাইকোর্টে মামলা করে। দীর্ঘদিন স্থগিত থাকার পর হাইকোর্ট মামলাটির স্থগিতাদেশ ভেঙে কার্যক্রম চালানোর আদেশ দেন। কিন্তু এই আদেশের ওপর বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করবে বলে বিভিন্ন রকমের হুমকি-ধামকি দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এভাবে ছয়টি বছর কেটে গেল। মামলাটির কার্যক্রম যেভাবে চলছে তাতে ২০-২৫ বছর লেগে যেতে পারে বলে আমাদের মনে হচ্ছে। এই অবস্থায় আমরা বৃদ্ধ মা-বাবা একমাত্র ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারব কিনা সন্দেহ হচ্ছে। মরার আগে অন্তত খুনিদের বিচার দেখে যেতে চাই। আমি একজন শিক্ষক হিসেবে আমার একটাই দাবি, যেন দ্রুত মামলাটির বিচার কার্যক্রম শেষ হয়। আমার মতো যেন আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়। সন্তান হারানোর যে কী ব্যথা তা নিজেই অনুভব করছি।
উবায়দুল হক/আরআই