ভবদহ ও তৎসংলগ্ন বিল এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করাসহ ছয় দফা দাবিতে বুধবার (জানুয়ারি) চতুর্থ দিনের মতো যশোর কালেক্টরেট ভবনের (ডিসি অফিস) সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন জলমগ্ন এলাকার শত শত নারী-পুরুষ।

মিছিলসহকারে তারা যশোর কালেক্টরেট ভবনের সামনে আসেন। লাগাতার এই অবস্থান কর্মসূচি প্রতিদিন দুপুর থেকে মুহুর্মুহু স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে গোটা জেলা প্রশাসক কার্যালয়। ব্যানার-ফেস্টুন ছাড়াও তাদের হাতে থাকে লাঙল, মই, আঁচড়া, ধান, শাপলার গাদা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই অবস্থান কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন বিলপাড়ের এসব মানুষ।

গত ৯ জানুয়ারি থেকে যশোর জেলা প্রশাসকের অফিস চত্বরে ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির ডাকে এই কর্মসূচি শুরু হয়। 

ভবদহ এলাকার ভুলবাড়িয়া গ্রামের হরেকৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, উঠানে জল, না খেয়ে এখানে এসেছি। যে অবস্থা, সামনে বোরো ধান হবে না। পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।

পাশে বসা নেবুগাতি গ্রামের শিবপদ রায় বলে উঠলেন, আমাগো বাঁচাতে সরকার অনেক পয়সা দেচ্ছে। কিন্তু সব টাকা খেয়ে ফেলছে। মন্ত্রী-এমপি-আমলারা সব খেয়ে নিচ্ছে। আমরা টিআরএম চাই। টিআরএম হলেই এলাকার মানুষ বেঁচে যাবে। সেনাবাহিনীকে দিয়েই এই কাজ করতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।

ছয় দফা দাবির মধ্যে ছিল নদী হত্যা, জনপদের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা, ফসল-বসতবাড়ি-জানমালের ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে জড়িত পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রস্তাবিত প্রায় ৪৫ কোটি টাকার ‘ভবদহ ও তৎসংলগ্ন বিল এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ’, অবিবেচনাপ্রসূত প্রকল্প বাতিল, ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে মাঘী পূর্ণিমার আগেই বিল কপালিয়ায় টিআরএম চালু, আমডাঙ্গা খাল সংস্কার প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন ও কাজের স্বচ্ছতা আনতে আন্দোলনকারী সংগঠনগুলোর নেতারা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সেনাবাহিনীর তদারকিতে সম্পন্ন করা, ভবদহ স্লুইসগেটের ভাটিতে পাইলট চ্যানেল করতে ৫-৬টি এক্সকাভেটর লাগানো, ২১, ৯ ও ৮ ভেন্টের গেট ওঠানামা করানোর ব্যবস্থা এবং জনপদের মানুষের ক্ষতিপূরণ, কৃষিঋণ মওকুফ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলছেন, নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে, অন্যদিকে পাউবো (পানি উন্নয়ন বোর্ড) ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ভবদহ স্লুইসগেট থেকে ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার নদী হত্যা করেছে। ওই এলাকার কতিপয় ঘের মালিক, ঠিকাদার ও পাউবোর কর্মকর্তারা একটি সিন্ডিকেট বানিয়ে লুটপাটের উৎসব বসিয়েছেন। তাদের কারণে আজ সেখানকার মানুষ জলমগ্ন।

তিনি আরও বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত জলমগ্ন ভবদহবাসীর পক্ষে ফলাফল না আসবে, ততক্ষণ এখানে অবস্থান করব। এতেও যদি কিছু না হয়, তবে আমরা ঢাকায় ডিজি অফিসে লাগাতার ধরনা দেব। এই এলাকার মানুষ জলে ডুবে মরবে আর গুটিকয়েক স্বার্থান্বেষী মানুষ লুটেপুটে খাবে, এমন পরিস্থিতি চলতে দেওয়া যাবে না।

প্রসঙ্গত, যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশ বিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। পলি পড়ে এ অঞ্চলের পানিনিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী নাব্যতা হারিয়েছে। ফলে নদী দিয়ে পানি নামছে না। বৃষ্টি হলেই এলাকার বিলগুলো উপচে ভবদহ অঞ্চলের বেশির ভাগ অংশ তলিয়ে যায়। সৃষ্টি হয় স্থায়ী জলাবদ্ধতার।

জাহিদ হাসান/এনএ