দিগন্তজোড়া মাঠ। মাঠে মাঠে হলুদের সমারোহ। হলুদ ফুলের মৌ-মৌ গন্ধে ফুলে ফুলে উড়ছে মৌমাছি। সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করছেন চাষিরা। 

এদিকে সরিষা ফুলের ছবি তুলতে ভিড় করছেন নানা বয়সী মানুষ। সরিষার হলুদ ফুলে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। বাম্পার ফলন হওয়ায় দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন শেরপুরের কৃষকরা।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, গত কয়েক বছর থেকে জেলায় এবার সরিষার আবাদ হয়েছে বেশি। ফলন ভালো ও লাভবান হওয়ায় কৃষকরা ঝুঁকছেন সরিষা আবাদে। 

২০১৮-১৯ অর্থবছরে জেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭ হাজার ৩৪২ হেক্টর। তবে অর্জিত হয়েছে ৬ হাজার ৮৮০ হেক্টর। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলে অর্জিত হয় ৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। ওই বছর দেশে করোনা মহামারি এবং চরাঞ্চলে বন্যার পানি দেরিতে নামায় অনেক কৃষক সরিষার আবাদ করতে পারেননি। এরপর চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে এবং ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ৭ হাজার ২১৫ হেক্টরে।

এদিকে শেরপুর জেলার পাঁচ উপজেলায় সরিষার আবাদ হলেও চলতি বছর সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে নকলায়। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে শেরপুর সদর উপজেলা। 

স্থানীয় কৃষকরা জানান, একর প্রতি সরিষা আবাদে খরচ পড়ে ১০-১২ হাজার টাকা। এবার জমি তৈরি ও হালচাষে প্রায় ২-৩ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। প্রতি একরে সরিষা উৎপাদন হবে প্রায় ১৫-২০ মণ। মৌসুমের সময় দাম কিছুটা কম থাকলেও প্রতি মণ সরিষা বিক্রি করা যাবে ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। তবে মজুত করে বছরের শেষে বিক্রি করলে প্রায় দ্বিগুণ দাম পাওয়া যাবে।

নকলার কায়দা গ্রামের সরিষাচাষি শরিফুল জানান, যেসব জমিতে পানি জমে থাকায় সময়মতো আমনের চারা রোপণ করা যায়নি সেসব জমিতে সরিষার আবাদ বেশি হয়। সরিষা আবাদ খুবই লাভজনক। তাই এবার আমি তিন একর জমিতে সরিষা চাষ করেছি। 

শেরপুর সদর উপজেলার ডাকপাড়া গ্রামের কৃষক রশীদ মিয়া জানান, আমরা আমন আবাদের পর পতিত জমিতে সরিষার আবাদ করে বাড়তি আয় করি। এবার দুই একর জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। এ সরিষা উঠিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বোরো ধানের চারা রোপণ করব। ফলে অল্প সময়ে একই জমিতে আমরা দুটি ফসল পেলাম। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মুহিত কুমার দে ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও জেলায় কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে প্রান্তিক চাষিদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় সরিষা আবাদের জন্য ৬ হাজার কৃষককে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় সরিষার আবাদ বেশ ভালো হয়েছে। 

জাহিদুল খান সৌরভ/এসপি