৫ বছর পর মিঠু হত্যার রহস্য উন্মোচন
গ্রেফতার ইমরান শেখ ওরফে মেহেদী চৌধুরী
বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে দুই বন্ধু বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে প্রথমে কোমল পানীয়র সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ান। পরে অজ্ঞান হয়ে পড়লে গলায় রশি বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। মরদেহ গুমের উদ্দেশ্যে বস্তায় ভরে মোটরসাইকেলে করে গাবখান ব্রিজের ওপর থেকে নদীতে ফেলে দেন দুই বন্ধু। এমনই পূর্বপরিকল্পিত ও লোমহর্ষক হত্যার শিকার হন খুলনার দৌলতপুর উপজেলার বাসিন্দা আলী হোসেন মিঠু।
ঘটনাটি ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বরের। এ ঘটনায় ওই বছরের ২৮ নভেম্বর মামলা করা হলেও ঘটনার পাঁচ বছর পর আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলার এক আসামির শ্যালিকার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের জেরেই মিঠুকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিন আসামি গ্রেফতার হওয়ার পর তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমন তথ্য পেয়েছে খুলনা সিআইডি।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে খুলনা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান জানান, দৌলতপুরের আলোচিত আলী হোসেন মিঠু হত্যা মামলার রহস্য পাঁচ বছর পর উন্মোচন করা হয়েছে। এ মামলায় গ্রেফতার তিনজন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মিঠুকে হত্যার বিস্তারিত তথ্য পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আরও তদন্ত করা হবে।
মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) খুলনা সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়, খুলনার দৌলতপুরের আলোচিত আলী হোসেন মিঠু অপহরণ ও হত্যার রহস্য পাঁচ বছর পর উন্মোচন করেছে খুলনা সিআইডি। আলী হোসেন মিঠুকে ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে তার কথিত বন্ধু রিয়াজুল ইসলাম ওরফে আহাদ শেখ (৩৫), মো. রাশেদুল ইসলাম (৩২) ও মো. সুমন মল্লিক (৩৫) কৌশলে খুলনা থেকে মোটরসাইকেল যোগে ঝালকাঠির রাজাপুর নিয়ে গলায় রশি পেঁচিয়ে হত্যা করে মরদেহ বস্তায় ভরে ঝালকাঠি গাবখান ব্রিজ থেকে ফেলে দেয় বলে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আসামি মো. রাশেদুল ইসলাম, সুমন মল্লিক এবং মেহেদী চৌধুরী ওরফে ইমরান।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর আসামি রাশেদুল ইসলাম ও রিয়াজুল ইসলাম ভিকটিম আলী হোসেন মিঠুর বাড়িতে এসে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে মিঠুকে নিয়ে মোটরসাইকেলে বের হয়ে যায়। পরবর্তীতে মিঠু আর ফিরে না আসায় তার বাবা মো. এনামুল সিকদার রিপন বাদী হয়ে ২৮ নভেম্বর দৌলতপুর থানায় মামলা করেন। মামলাটি থানা পুলিশ তদন্ত করে। পরবর্তীতে মামলাটির তদন্তভার সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়।
বিজ্ঞাপন
খুলনা সিআইডির এসআই মো. রফিকুল ইসলাম তদন্ত করে চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি খুলনার রূপসা থানাধীন বাগমারা এলাকা থেকে দীর্ঘদিন পলাতক থাকা এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. রাশেদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেন। পরবর্তীতে আসামি মো. সুমন মল্লিককে (৩৫) গত ৫ জানুয়ারি রূপসা থানাধীন বাধাল গ্রাম থেকে এবং আরেক আসামি ইমরান শেখ ওরফে মেহেদি চৌধুরীকে (৩৪) গত ২৫ জানুয়ারি ঝালকাঠি সরকারি কলেজের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ মামলার এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি রিয়াজুল শেখ আহাদের শ্যালিকার (১৮) সঙ্গে ভিকটিম আলী হোসেন মিঠুর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এজাহারনামীয় আহাদ তার শ্যালিকা ও মিঠুর প্রেমের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি। তিনি মিঠুকে তার শ্যালিকার সঙ্গে মেলামেশা করতে নিষেধ করেন। কিন্তু মিঠু তার কথা শোনেননি। এ কারণে তিনি মিঠুকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন।
আহাদ একজন পেশাদার অপরাধী। তিনি খুন ও অস্ত্রসহ একাধিক মামলার আসামি। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আহাদ মিঠুর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ঘটনার দিন ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর রাশেদুলের মোবাইল নম্বর দিয়ে আহাদ মিঠুকে ফোন করে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে। মিঠুর এফজেড মোটরসাইকেলে তিনজন ঝালকাঠি যান। পূর্বে সেখানে অবস্থানরত আসামি সুমন মল্লিক এবং ইমরান শেখ ওরফে মেহেদী চৌধুরী মিলে ইমরানের খালু মৃত বারেক ডিলারের পরিত্যাক্ত বাসায় যান। সেখানে সবাই মিলে কোমল পানীয়র সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে মিঠুকে অজ্ঞান করেন। পরে গলায় রশি বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর মিঠুর মরদেহ একটি বস্তায় ভরে মোটরসাইকেলে করে গাবখান ব্রিজের ওপর থেকে নদীতে ফেলে দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা সিআইডির এসআই মো. রফিকুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন পর মিঠু হত্যার রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হয়েছে। মামলার আসামি রিয়াজুল শেখ আহাদ পলাতক রয়েছেন।
মোহাম্মদ মিলন/আরএআর