বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে ৭ কাউন্সিলরের করা নোটিশের জবাব দিয়েছে নগরভবন কর্তৃপক্ষ। ৬টি পয়েন্টে দেওয়া জবাবে কাউন্সিলরদের করা অভিযোগ অসত্য এবং ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করা হয়। 

পাশাপাশি নোটিশদাতা কাউন্সিলরবৃন্দ সিটি কর্পোরেশন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও বর্তমান পরিষদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলে উল্লেখ করা হয়। একই সঙ্গে কাউন্সিলরবৃন্দ যেসব অভিযোগ তুলে লিগ্যাল নোটিশ করেছিলেন সেটার প্রমাণ দিতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নগর ভবন।

সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহমেদ বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট জগদীশ চন্দ্র সরকারের মাধ্যমে নোটিশ প্রদানকারী অ্যাডভোকেট মো. আজাদ রহমানের কাছে রোববার (১৬ জানুয়ারি) ডাকযোগে জবাব পাঠান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস। নোটিশের জবাব দেওয়ার বিষয়টি মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেন তিনি।

জবাবে উল্লেখ করা হয়েছে, সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরদের সম্মানীভাতা সরকার কর্তৃক ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারিত থাকায় সকল কাউন্সিলরদের এ ভাতা দেওয়া হচ্ছে। যেসব কাউন্সিলর যাতায়াত ও যোগাযোগ বাবদ ভাউচার জমা দিয়েছেন তাদের ৬ হাজার ৫০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নোটিশ পাঠানো কাউন্সিলরবৃন্দ কোনো ভাউচার জমা না দেয়ায় তাদের ৬ হাজার ৫০০ টাকা করে দেওয়া হয়নি। কাউন্সিলরদের নগর ভবনে যাওয়া নিষিদ্ধ বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মনগড়া ও উস্কানিমূলক বলা হয়েছে। 

কারণ নগর ভবনের কাছে ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রথম সাধারণ সভা সম্পূর্ণ ধারণকৃত ভিডিও চিত্র সংরক্ষিত আছে। ওই সভায় বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিকবৃন্দ ও গণমাধ্যমকর্মী এবং সুশীল সমাজ উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সেখানে এমন কোনো সিদ্ধান্ত এমনকী এমন কোনো শব্দও উচ্চারণ হয়নি। বরং নগর ভবনে কাউন্সিলরদের বসার জন্য আলাদা কক্ষের ব্যবস্থা রয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান (চতুর্থ) পরিষদ কোনো ধরনের হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ায়নি উল্লেখ করা হয়।

কর্মচারী বহিষ্কারের অভিযোগের জবাবে বলা হয়েছে, কতিপয় অসাধু স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে জনস্বার্থে ও সিটি কর্পোরেশনের কাজের স্বার্থে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশাসনিক শাখায় নিয়োজিত করা হয়েছে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন আইন) ২০০৯ অনুযায়ী এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পরিচালিত হয়। যা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অবগত আছেন। 

প্রসঙ্গত, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে প্রেষণে একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপ-সচিব), সচিব (সিনিয়র সহকারী সচিব), নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (সহকারী সচিব) পদমর্যাদার কর্মকর্তাগণ আইনের বিষয়টি দেখেন।

নোটিশের সর্বশেষ ছয় নম্বর অভিযোগের জবাবে বলা হয়েছে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের হাট-বাজারসমূহ বিধি অনুযায়ী জাতীয় এবং স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপন দিয়ে ইজারা দেওয়া হয়েছে।

নোটিশের জবাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যে ৭ কাউন্সিলর মেয়রসহ তিনজনকে নোটিশ পাঠিয়েছেন তারা ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর পরিষদের ১৬তম মাসিক সাধারণ সভায় উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় তারা এমন কোনো অভিযোগ উত্থাপন করেননি। বরং সিটি মেয়রকে হেয় প্রতিপন্ন করতে লিগ্যাল নোটিশে মিথ্যা ও মনগড়া তথ্য তুলে ধরেছে।

প্রসঙ্গত, ২ জানুয়ারি আইনজীবীর মাধ্যমে সিটি মেয়র, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সচিবের বিরুদ্ধে ৬টি অভিযোগ উল্লেখ করে লিগ্যাল নোটিশ করেন সাত কাউন্সিলর। নোটিশ গ্রহিতাদের ১৫ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। উল্লেখিত সময়ের মধ্যেই নোটিশের জবাব দিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ। 

নোটিশ দেওয়া সাত কাউন্সিলর হলেন, সিটি কর্পোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. হুমায়ুন কবির, ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম বাদশা, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ফরিদ আহম্মদ, ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান, ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আমির হোসেন বিশ্বাস, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরীফ মো. আনিছুর রহমান (আনিছ শরীফ) ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার।

নোটিশে তারা উল্লেখ করেন, সিটি কর্পোরেশনের স্থায়ী বিভিন্ন কর্মকর্তাদের বে-আইনিভাবে ওএসডি রেখে মাস্টাররোলে অদক্ষ জনবল নিয়োগ দিয়ে সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা করা হচ্ছে। সরকারি আদেশ-নির্দেশ অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন পরিচালনার নিয়ম থাকলেও তা মেয়রসহ নোটিশ পাওয়া তিনজন খামখেয়ালি করে কাজ চালাচ্ছেন। 

এতে কর্পোরেশনের স্থবিরতা ও জনঅসন্তোষ বাড়ছে। একইভাবে হাটবাজার টেন্ডার প্রক্রিয়ায় না দিয়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের ইজারা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নোটিশ প্রদানকারী সাত কাউন্সিলরকে প্রাপ্ত সম্মানী সঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি সিটি কর্পোরেশনে কাউন্সিলরদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমএএস