ইয়াসিন আলী

দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) আয়োজনে শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় সেরা বক্তা নির্বাচিত হয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের মো. ইয়াসিন আলী। ‘করোনা এবং বঙ্গবন্ধু প্রতিভা’ শীর্ষক প্রতিযোগিতায় এই কৃতিত্ব অর্জন করে সে। সার্কভুক্ত ৮টি দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বক্তার পুরস্কার পেয়েছেন ইয়াসিন। সে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার আলীনগর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে দশম শ্রেণির ছাত্র।

বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ইয়াসিন আলীকে পুরস্কার তুলে দেন, ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। গত ১৩ জানুয়ারি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির সার্ক ইউনিভার্সিটি অডিটোরিয়ামে ইয়াসিন আলীর হাতে শ্রেষ্ঠ বক্তার পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। সার্কভুক্ত ৮ দেশের প্রত্যেক দেশ থেকে ৩ জন করে মোট ২৪ জন প্রতিযোগী নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শ্রীলঙ্কা ও ভুটানের দুইজন প্রতিযোগীর করোনা পজিটিভ হওয়ার কারণে তারা অংশ নিতে পারেননি। তাই এই প্রতিযোগিতায় ৮ দেশের ২২ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়।

সার্ক আঞ্চলিক ৮টি দেশের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সার্ক প্রতিবছর এমন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি বিবেচনায় এ বছর প্রতিযোগিতায় করোনাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। ‘করোনা এবং বঙ্গবন্ধু প্রতিভা’ শীর্ষক প্রতিযোগিতা দুইটি রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় প্রথম রাউন্ডে ‘উপস্থিত বক্তৃতা’ ও দ্বিতীয় রাউন্ডে ‘বিতর্ক প্রতিযোগিতা’ আয়োজন করা হয়।

‘পৃথিবী ও করোনাভাইরাস’ এই বিষয়ে উপস্থিত বক্তৃতা প্রদান করে ইয়াসিন। তার বির্তকের বিষয় ছিল ‘মানসিকতায় বৃদ্ধাশ্রম তৈরির মূল কারণ’। দুই রাউন্ড শেষে সার্কের বিচারকমণ্ডলী ইয়াসিন আলীকে শ্রেষ্ঠ বক্তা ঘোষণা করে। পরে শ্রেষ্ঠ বক্তার পুরস্কার তুলে দেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হওয়ায় ইয়াসিন আলী সার্ক থেকে আজীবন মাসিক ৬ হাজার টাকা হারে বৃত্তি পাবে।

গোমস্তাপুরের আলীনগর গ্রামের আনোয়ারুল ইসলাম ও নাহার বানু বিউটির ৩ মেয়ে ও এক ছেলের ছোট সন্তান ইয়াসিন আলী। জানা যায়, বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই বক্তৃতা ও বির্তক প্রতিযোগিতায় পারদর্শী ইয়াসিন। নিজ স্কুলের সব প্রতিযোগিতাতেই শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হয় ইয়াসিন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ৮ দেশের প্রতিযোগীদের মধ্যে ইয়াসিনের এই সাফল্যে খুশি তার পরিবার, সহপাঠী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। 

সার্কের শ্রেষ্ঠ বক্তা ইয়াসিন আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই সাফল্যে আমি ভীষণ খুশি। বর্হিবিশ্বে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ বক্তার পুরস্কার পাওয়া অনেক সম্মান ও আনন্দের। এই পুরস্কার পাওয়ায় দেশের প্রতি আরও দায়িত্ববোধ বেড়ে গেছে। এই অর্জনে অনেক ভালো লাগছে। আশা করি, আাগামীতে এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারব।

ইয়াসিনের বাবা আনোয়ারুল ইসলাম পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তিনি জানান, আমি ছেলের এই কৃতিত্বে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছি। তার স্বপ্ন একজন বিচারক হওয়ার। আশা করি, সে এই স্বপ্ন পূরণ করতে সক্ষম হবে। আমরা চাই, দেশের উন্নয়নে সে নিজের সর্বোচ্চ মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে কাজ করুক। আমাদের ইচ্ছে, এভাবেই সারাবিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে দিবে ইয়াসিন। এসময় সকলের কাছে ছেলের জন্য দোয়া চান তিনি। 

আলীনগর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সহকারী শিক্ষক মঞ্জুয়ারা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইয়াসিন বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বক্তৃতা ও বির্তক প্রতিযোগিতায় পারদর্শী। প্রত্যেকবার স্কুলের প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ হয়। তবে এবার দেশের বাইরে, এমনকি ৮টি দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে শ্রেষ্ঠ হয়েছে। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। সে পড়াশোনাতেও খুবই ভালো।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ইয়াসিনের এমন সাফল্য অত্যন্ত সম্মানের। তার সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে কোনো পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন হলে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন তার পাশে রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ইয়াসিনের এমন সাফল্য দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হবে। যে যেই অবস্থায় থাকুক না কেন, তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে তার প্রতিভা বিকাশের সুযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের এসব প্রতিভা বিকাশের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। আগামী দিনে, ইয়াসিনের মতো শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সার্ক দক্ষিণ এশিয়ার একটি আঞ্চলিক সংস্থা। এর সদস্য দেশগুলো হল বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান ও আফগানিস্তান। চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, মায়ানমার, মরিশাস ও অস্ট্রেলিয়া হল সার্কের পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র।

জাহাঙ্গীর আলম/এমএসআর