করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। কিন্তু গাইবান্ধা কলেজিয়েট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তাদের পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

অভিভাবকরা বলছেন, তারা অনেকটা বাধ্য হয়েই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে কোমলমতি শিশুদের বিদ্যালয়ে আনছেন। শিক্ষকদের দাবি, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চালাচ্ছেন বিদ্যালয়। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মারাত্মক করোনা ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য-সংশ্লিষ্টরা।

মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) সরেজমিনে সকাল সাড়ে ৯টায় দেখা যায়, গাইবান্ধা সরকারি কলেজ-সংলগ্ন কলেজিয়েট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশের ভবনের দোতলায় তিনটি কক্ষে দরজা বন্ধ করে কোমলমতি শিশুদের পাঠদান করাচ্ছেন তিন নারী শিক্ষক। তিনটি কক্ষের শিক্ষার্থী সবাই প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে পড়ে। বিদ্যালয়ের তিনটি শ্রেণিকক্ষে প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থী বসা। কক্ষের প্রতিটি বেঞ্চে দুজন করে শিক্ষার্থী বসলেও তাদের কারও মুখেই নেই মাস্ক। এমনকি পাঠদানকারী শিক্ষকদেরই মুখে নেই মাস্ক। ভবনের বারান্দায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা কেউ বসে কেউ দাঁড়িয়ে আছেন। অভিভাবকদের বেশির ভাগরেই মুখে ছিল না কোনো মাস্ক।

এ সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের একাধিক অভিভাবক জানান, আমরা শিক্ষকদের সিদ্ধান্তমতে বাধ্য হয়েই বাচ্চাদের বিদ্যালয়ে নিয়ে আসছি। যদি না নিয়ে আসি অন্য শিশুরা পড়া লেখায় এগিয়ে যাবে। আর আমার বাচ্চাটা পিছিয়ে যাবে। এ জন্যই করোনার ঝুঁকি নিয়েই বাচ্চাকে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসছি।

আরেক অভিভাবক জানান, দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার খবর শুনে আমি শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। শিক্ষকরা বলেছেন, আপনারা বাচ্চাদের স্কুলের ইউনিফর্ম (নির্ধারিত পোশাক) পরে আনবেন না।

এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে পাঠদানকারী শিক্ষকরা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে নাম-পরিচয় কিংবা কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে শিক্ষার্থীরা সবাই প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির বলে জানান তারা।

জানতে চাইলে কলেজিয়েট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঞ্জুমান আরা বেগম বিদ্যালয় চালু রাখার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, কলেজিয়েট বিদ্যালয়টি বরাবরই ভালো ফলাফল করে আসছে। স্কুল করানো হচ্ছে না। তাদের প্রাইভেট পড়ানো হচ্ছে। তবে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট ও টাকা নেওয়া প্রশ্নে কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাকিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার সময়ে বিদ্যালয়ে পাঠদানের কোনো সুযোগ নেই। কলেজিয়েট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে ক্লাস চালু রাখার বিষয়টি জেনেছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গাইবান্ধার সিভিল সার্জন ডা. আ খ ম আখতারুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে বিধায় সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। সেখানে যদি পাঠদান কার্যক্রম চালু থাকে, তবে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের সুরক্ষায় অবশ্যই বিদ্যালয়টির পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখা উচিত। একই সঙ্গে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসা জরুরি বলেও মনে করেন তিনি।

উল্লেখ্য, দেশব্যাপী করোনার সংক্রমণ রোধে চলতি মাসের ২২ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

রিপন আকন্দ/এনএ