বাঁওড়টি জেলা শহর থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ফলে শহরের কোলাহল থেকে মুক্ত এই জলাশয়টি। তাই প্রতি বছরের মতো এবারও শীতে অতিথি পাখি এসে ভিড় জমিয়েছে এই বাঁওড়ে। বলছিলাম মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের ঘোপ বাঁওড়ের কথা।

এই জলাশয়ের আশপাশের মানুষের এখন সকালের ঘুম ভাঙে দূর-দূরান্ত থেকে আগত অতিথি পাখির কিচিরমিচির শব্দে। এসব পাখিরা এখন মুখর করে রেখেছে এই জলাশয়ের চারপাশ। 

পূর্ব আকাশে সূর্যের আলো ফুটতেই শুরু হয় পাখিদের ছুটোছুটি আর ওড়াউড়ি। এ সময় সাঁতার খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে পাখিরা। এই নান্দনিক ও নৈসর্গিক দৃশ্য দুচোখ ভরে অবলোকন করতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে পাখিপ্রেমী মানুষ। লোকজন এসে ভিড় জমাই বাঁওড়ের ধারে।

স্থানীয় পাখিপ্রেমীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উড়ে আসা পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে বেশি দেখা যায় পাতি সরালী। তাছাড়া, বালিহাঁস, সারস পাখি, ডুবুরি পাখিসহ নানা ধরনের অতিথি পাখির সঙ্গে দেশীয় পাখির কলকাকলিতে এ সময় মুখর হয়ে ওঠে মহম্মদপুরের এই ঘোপ বাঁওড়।

পৃথিবীতে প্রায় পাঁচ হাজার প্রজাতির পাখির মধ্যে অনেক প্রজাতির পাখি নির্দিষ্ট সময়ে শীতপ্রধান দেশ থেকে খাবার ও উষ্ণতার জন্য হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে চলে আসে সুজলা-সুফলা আমাদের এই দেশে।

বাসিন্দা আকাশ মোল্লা বললেন, শীতের শুরুতেই প্রতিবছর আমাদের এই বাঁওড়ে অতিথি পাখিদের দেখা মেলে। এ সময় ঝাঁক বেঁধে বিচিত্র স্বরে ডাকতে ডাকতে উড়ে চলে আসে অতিথি পাখিরা। পাখিরা কখনো পানিতে ডুব দিচ্ছে, আবার আপন মনে উড়াল দিচ্ছে আকাশে, কেউ আবার পালকে মুখ গুঁজে রোদ পোহাচ্ছে।

স্থানীয় আব্দুর রব ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানকার মানুষেরা অতিথি পাখিদের কোনো ক্ষতি করে না। এখানে কেউ পাখি শিকারও করেন না। তাই অতিথি পাখিরা নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে এই জলাশয়ে শীতের সময়ে অবস্থান করতে পারে।

মোহাম্মদপুর আমিনুর রহমান ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক জোয়ারদার তামজীদ উন নবী বলেন, প্রতি বছর ঘোপ বাঁওড় ঘিরে প্রকৃতি প্রেমীদের ঢল নামে। এবে এ বছর পাখি একটু কম এসেছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কমকর্তা ডা. হাদিউজজ্জামান বলেন, পাখিরা শুধু প্রকৃতির শোভাবর্ধন করে না, বরং প্রাকৃতিক ভারসাম্যও রক্ষা করে। পোকামাকড় খায় এরা কৃষকের অনেক উপকার করে থাকে। জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার জন্য এসব অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তিনি এলাকাবাসীর আরও সহযোগিতা কামনা করেছেন।

অপূর্ব মিত্র/এমএসআর