অতিথি পাখির কলতান আর ডানা ঝাপটানোর শব্দে ঘুম ভাঙে ঘোপ বাঁওড়বাসীর

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার নৈসর্গিক সৌন্দর্য ঘোপ বাঁওড়। বাঁওড়ে প্রতিবছরের নির্দিষ্ট সময়ে শীতপ্রধান দেশ থেকে ছুটে আসে অতিথি পাখি। এসব অতিথি পাখির ঝাঁকে ঝাঁকে বিচরণ, কিচিরমিচির আর জলে ডানা ঝাপটানোর শব্দ ভেঙে দেয় নিরব গ্রামের নির্জনতা। 

এছাড়া দেশীয় প্রজাতির পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে বাঁওড় এলাকা। এসব পাখির অভয়াশ্রম বা জায়গাটি সংরক্ষণে জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম ২৯ জানুয়ারি সরেজমিন পরিদর্শনে আসেন।

জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম পরিদর্শন শেষে জানান, ঘোপ বাঁওড় মহম্মদপুরের অন্যতম সেরা একটি জলাশয়। বিশেষ অনন্যধর্মী জলাশয়টি আমি দেখেছি। এখানে তিনটি বৈশিষ্ট্য আছে, যেটা অন্য জলাশয়ে নেই। পানির নিচে অনেক সুন্দর আগাছা আছে; ধানের মত মনে হয়। খুব স্বচ্ছ পানি এবং এখানে অতিথি পাখি আসে প্রতিবছর। সুতরাং এটা জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে মাগুরাতে অবশ্যই অনন্য। 

তিনি আরও বলেন, আমরা চিন্তা করেছি যে এটাকে কীভাবে দেশের মানুষের কাছে পরিচিতি করানো যায়। মাগুরাকে মানুষ বিশেষধর্মী কিছু দিয়ে চিনুক। সেই লক্ষ্যে আমরাও এটাকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেব জীববৈচিত্র্য ঠিক রেখে।

এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আফাজ উদ্দিন, মহম্মদপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবু আব্দুল্লাহেল কাফি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামানন্দ পাল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) হরেকৃষ্ণ অধিকারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসকের সহধর্মিণী প্রফেসর ড. নাছরিন আখতার বলেন, ‘আগে আমি ফেসবুকে ঘোপ বাঁওড়ের নিউজ দেখেছিলাম। তখন থেকে আমি চিন্তা করেছিলাম এই ঘোপ বাঁওড়ে আসব। এসে আমি যতটা কল্পনা করেছিলাম, তার চেয়ে বেশি আপ্লুত হয়ে গেলাম। এত সুন্দর পাখি এবং সুন্দর তাদের বিচরণ। আমি শুনেছি প্রশাসন এটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছে। ভবিষ্যতে এটা একটা পর্যটন কেন্দ্র হবে। আমি জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করব এটাকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে একটি পর্যটন কেন্দ্রে রুপান্তর করার।

মহম্মদপুর উপজেলার নালিয়ার বিল, কাতলাশুরের বিল, ইছামতির বিল, ফলিয়ারবিলসহ বিভিন্ন খাল-বিল, জলাশয় ও নদীর অববাহিকায়ও দূর-দূরান্তের এ পাখির বিচরণ লক্ষ্য করা যায়।

নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই বাঁওড়ে আসেন পর্যটকরা

টকবালিহাঁস, সারস পাখি, ডুবুরি পাখিসহ নানা অতিথি পাখির সঙ্গে দেশীয় পাখির কলকাকলি ইছামতির বিল ও ঘোপ বাঁওড়ের সৌন্দর্যকে আরও মনোরম করে তোলে। এসব পাখির কলরবে ভোরের কম্বল জড়ানো ঘুম ভাঙে বিল-বাঁওড়বাসীর। নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে শিশু, নারী- রুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ইতোমধ্যে আসতে শুরু করেছেন।

এসব এলাকা ঘুরে জানা যায়,  এক শ্রেণির পাখি শিকারিরা আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এসব পাখি শিকার করছেন।

নহাটা ইউনিয়ন ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শাহাজাহান মিয়া বলেন, আমাদের দেশে যে সকল অতিথি পাখি আসে সেগুলো আমাদের পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অথচ কিছু অসাধু চক্র বিষটোপ, ফাঁদ পেতে এদেরকে হত্যা করে। আমাদের এই উপজেলায়ও অতিথি পাখি শিকার হচ্ছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এসব পাখি বীজের বিস্তরণ ও পরাগায়ন ঘটিয়ে আমাদের ফসলেরও উৎপাদনে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। পাখি কিন্তু আমাদের চিত্তবিনোদনের একটি অন্যতম উপাদান। এদেরকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে আমাদের দেশের একটি সৌন্দর্য বিনষ্ট হচ্ছে। পাখি হত্যা বন্ধে ইতোমধ্যে আমরা সচেতনতামূলক সাইকেল র‌্যালি করেছি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রামানন্দ পাল বলেন, ঘোপ বাঁওড় সংরক্ষণের জন্য আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছি।

জালাল উদ্দিন হাককানী/এমএসআর