রংপুরের পীরগাছায় নিজ মেয়েকে অপহরণ ও গুম করার মামলায় লুৎফর রহমান নামে এক বাবাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২-এর বিচারক মো. রোকনুজ্জামান এ রায় প্রদান করেন।

রায় ঘোষণার সময় অভিযুক্ত আসামি লুৎফর রহমান আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

আদালত ও মামলার বিবরণে জানা গেছে, পীরগাছা উপজেলার মকরমপুর গ্রামের লুৎফর রহমানের মেয়ে রাবেয়া খাতুন ভালোবেসে বিয়ে করেন একই এলাকার আব্দুর রশীদ নামের এক যুবককে। এ নিয়ে রাবেয়ার পরিবারের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের চরম বিরোধ দেখা দেয়। একপর্যায়ে ১৯৯২ অথবা ৯৩ (আনুমানিক) রাবেয়ার ভাসুর হোসেন আলী হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ ঘটনায় রাবেয়ার বাবাসহ তার পরিবারের লোকজনদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়। এ মামলায় লুৎফর রহমানসহ অন্য আসামিরা নিম্ন আদালতে খালাস পান।

কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের একমাত্র চাক্ষুস সাক্ষী ছিলেন রাবেয়া খাতুন। এ ঘটনার পর রাবেয়া খাতুন অনেকবার তার বাবা লুৎফর রহমানকে বলেছিলেন যে তার সামনে ভাসুর হোসেন আলীকে হত্যা করা হয়েছে এবং বিষয়টি তিনি উচ্চ আদালতে সাক্ষ্য দেবেন। এ ঘটনার পর থেকে বাবা লুৎফর রহমান তার মেয়ে রাবেয়াকে হত্যার পর লাশ গুম করার পরিকল্পনা করতে থাকেন।

একপর্যায়ে ১৯৯৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাবেয়াকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য কৌশলে পীরগাছার চৌধুরানী বাজারে বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে যান লুৎফর রহমান ও তার সহযোগীরা। কিন্তু রাবেয়া তার বাবার মতলব বুঝতে পেরে চিৎকার শুরু করলে বাধ্য হয়ে লুৎফর রহমান রাবেয়াকে বাসায় ফেরত নিয়ে যান।

এরপর থেকে রাবেয়ার কোনো সন্ধান না পাওয়ায় তার ছেলে রাঙ্গা মিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরবর্তীকালে মায়ের কোনো সন্ধান না পেয়ে পীরগাছা থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা গ্রহণ না করায় আদালতে নালিশি মামলা করেন রাঙ্গা মিয়া।

বিচারক মামলাটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেন। পুলিশ তদন্ত শেষে বাবা লুৎফর রহমানসহ ১০ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে এক আসামি মৃত্যুবরণ করেছেন।

মামলায় ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেলা শেষে আসামি লুৎফর রহমানকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা ও অপর আসামিদের খালাস আদেশ দেন বিচারক। জরিমানার অর্থ নিহত রাবেয়ার ছেলে রাঙ্গাসহ তার সন্তানদের প্রদান করার আদেশ দেওয়া হয়।

সরকারপক্ষে মামলা পারিচালনাকারী আইনজীবী নারী ও মিশু নির্যাতন দমন আদালত-২-এর বিশেষ পিপি জাহাঙ্গীর হোসেন তুহিন বলেন, দীর্ঘদিন পর চাঞ্চল্যকর একটি মামলার রায় হয়েছে। রায়ে প্রধান অভিযুক্ত সাজা পেলেও অপর আসামিরা খালাস পেয়েছেন।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এনএ