ফরিদপুরে বন্ধ ঘোষণার পরও চলছে সেই হাসপাতাল
নবজাতকের ভূমিষ্ঠের সময় ওই নবজাতকের হাতের জোড়া ভেঙে ফেলার ঘটনায় ফরিদপুরের আরামবাগ প্রাইভেট হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয় গত ১৯ জানুয়ারি দুপুরে। কিন্তু ওই দিন বিকেল থেকেই হাসপাতালটি আবার চালু করা হয়। বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেল পর্যন্ত সরেজমিনে হাসপাতালের কার্যক্রম চলমান দেখা গেছে।
বন্ধ করার পরও কেন পুনরায় চালু করা হয়েছে হাসপাতালটি, এ ব্যাপারে সন্তোষজনক কোনো জবাব দিতে পারেননি ফরিদপুর জেলা সিভিল সার্জন।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর এক নবজাতকের ভূমিষ্ঠের সময় ওই নবজাতকের হাতের হাড়ের জোড়া ভেঙে ফেলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি নবজাতকের বাবা আরিফুল আলম ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ জানুয়ারি আরামবাগ হাসপাতাল নামের ওই প্রাইভেট হাসপাতালটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বন্ধ করার কারণ হিসেবে সেদিন (১৯ জানুয়ারি) সিভিল সার্জন সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ওই হাসপাতালটি ১০ শয্যাবিশিষ্ট। এ জাতীয় জাসপাতাল পরিচালনার জন্য তিনজন চিকিৎসক ও ছয়জন স্টাফ নার্সকে নিয়োগ দিতে হয়। কিন্তু অভিযানকালে মাত্র একজন চিকিৎসক ও তিনজন স্টাফ নার্সকে কর্মরত দেখা যায়।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, এ জাতীয় একটি হাসপাতাল পরিচালনার জন্য প্রচলিত নিয়ম মেনে সব শর্ত পূরণ না করা পর্যন্ত হাসপাতালটির কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই দিন বিকেল থেকেই পুনরায় হাসপাতালটি চালু করা হয়। পরে গত ২১ জানুয়ারি পুলিশের একটি দল গিয়ে হাসপাতালটির কার্যক্রম পুনরায় বন্ধ করে দেয়। কিন্তু গত ২২ জানুয়ারি থেকে পুনরায় ওই হাসপাতালটি চালু করে কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন মো. ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাসপাতালটি চালু করে।
এ বিষয়ে আরামবাগ হাসপাতালের চেয়ারম্যান আবদুত তাওয়াব বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব লোকমান হোসেন আমার পরিচিত। লোকমান হোসেন ফরিদপুরের সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, তবে সহকারী সচিবের কথায় আমরা হাসপাতালটি চালু করিনি। সিভিল সার্জন আমাদের যেসব শর্ত দিয়েছিলেন, তা পূরণ করে সিভিল সার্জনের মৌখিক নির্দেশে হাসপাতালটি পুনরায় চালু করেছি।
মৌখিক নির্দেশের কথা অস্বীকার করে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন মো. ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, সচিব নামে তার কাছে একটি ফোনকল এসেছিল। তবে ওপর মহল থেকে লিখিত কোনো নির্দেশ তিনি পাননি। তিনি আরও বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হাসপাতালটি চালু করার জন্য কোনো মৌখিক নির্দেশ আমি দিইনি।
তাহলে হাসপাতালটি কীভাবে চালু হলো, প্রশ্ন করা হলে সিভিল সার্জন বলেন, এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।
এদিকে নবজাতকের হাতের হাড়ের জোড়া ভেঙে ফেলার ঘটনায় আরামবাগ হাসপাতালের মালিক ও চিকিৎসকসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে গত ২২ জানুয়ারি নবজাতকের বাবা আরিফুল আলম বাদী হয়ে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মো. আব্দুল জলিল জানান, মামলায় আরামবাগ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাসুদ (৫৫), কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শারমীন সুলতানা জুঁই, ডা. প্রিন্স, ডা. রাজিবসহ অজ্ঞাতনামা আরও তিন-চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
এজাহারে অভিযোগ করা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে একই উদ্দেশ্যে ভুয়া সরকারি কর্মচারী পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে নবজাতকের হাড় ভেঙে গুরুতর জখম ও হুমকি প্রদান করেন।
এ নিয়ে গত ১৯ জানুয়ারি অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা পোস্টে 'সিজারের সময় ভেঙে গেছে নবজাতকের হাত, হাসপাতাল বন্ধ' শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
জহির হোসেন/এনএ