ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনপুর এলাকায় অবস্থিত জাহিন নিটওয়্যার নামে একটি রফতানিমুখী পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) ছুটির দিন থাকায় প্রতিষ্ঠানটির মূল অংশ বন্ধ ছিল। কারখানায় খুব অল্প সংখ্যক শ্রমিক ছিলেন। 

কারখানার সুইং বিভাগের শ্রমিক হাবিব জানান, বিকেল পৌনে ৪টার দিকে আগুন লাগে। কারখানার নিরাপত্তারক্ষীরা প্রথম বের হয়ে ২ নম্বর ইউনিটের সামনে ‘আগুন আগুন’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। এ কারখানায় প্রায় তিন হাজার শ্রমিক কাজ করেন। কিন্তু শুক্রবার বেশিরভাগ ইউনিট বন্ধ ছিল। তবে প্রতিটি ইউনিটে কিছু শ্রমিক তৈরি পোশাক প্যাকেট করে শিপমেন্টের জন্য ৬ নম্বর ইউনিটে সরানোর কাজ করছিলেন। 
  
কারখানার আশেপাশে বেশকিছু শ্রমিক বসবাস করেন। দূর থেকে ধোঁয়া দেখে তারা আগুন নেভাতে আসেন। প্রচুর ধোঁয়া পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ধোঁয়ার কারণে পাশের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকরা ফ্যাক্টরির ২ নম্বর ইউনিটের দোতলা শেডের আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সেখান থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে শ্রমিকরা সেখানে ঢুকে জানালার কাঁচ ভেঙে দেন, যাতে ধোঁয়া বের হতে পারে। কিন্তু আগুনের তীব্রতা বাড়তে থাকলে তারা নেমে এসে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নেভাতে শুরু করেন।
  
জাহিন নিটওয়্যারের নির্বাহী পরিচালক শফিউদ্দিন ভূঁইয়া জানান, আগুন লাগার পরপরই নিরাপত্তারক্ষীরা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিতে বলেন। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আসতে ৩০-৩৫ মিনিট দেরি করে। এ সময় আগুন ২, ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ইউনিটে ছড়িয়ে পড়ে। নিরাপত্তাকর্মীরা পাশের পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেন। পুলিশ বিদ্যুৎ বিভাগকে ফোন দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করেন।

তিনি আরও জানান, প্রতিটি ইউনিটের ওপরের অংশ স্টিল স্ট্রাকচারের। ওপরের অংশ কাঠ ও বোর্ড দিয়ে ভেতরের অংশে ডেকোরেশন করা। এখানে মূলত গেঞ্জি, পলো শার্ট, জ্যাকেট, ট্রাউজার তৈরি হয়। প্রতিটি ইউনিটের ওপরের অংশে এসব তৈরি পোশাক প্রচুর পরিমাণে মজুত ছিল। আগুনে তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, বিকেল সাড়ে ৪টায় আমরা আগুন লাগার খবর পাই। পৌনে ৫টায় ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এরপর একে একে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সোনারগাঁ, বন্দরসহ আশপাশের ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো এসে আগুন নেভানোর কাজ করতে থাকে। রাত সাড়ে ৮টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করছিল। 

আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। কারখানা কমপ্লেক্সের তিনটি দোতলা ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় আগুন জ্বলছে। এ ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। 

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ বিল্লাল হোসেন বলেন, কারখানার পরিসর বড় হওয়ায় এবং আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ায় নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের বেগ পেতে হচ্ছে। তবে, কারখানা বন্ধ থাকার কারণে ভেতরে কোনো শ্রমিক আটকা পড়েননি বলে আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। হতাহতেরও কোনো খবর নেই।

রাজু আহমেদ/আরএআর