শেখ হাসিনা সেতুর নিচ থেকে চলছে বালু উত্তোলন
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় তিস্তা ও ঘাঘট নদীর বিভিন্ন স্থান এখন বালুমহাল। বন্যার পানি শুকিয়ে জেগে ওঠা চরগুলো এখন বালুখেকোদের দখলে। প্রশাসনের নীরবতায় নদীর বুক থেকে প্রতিদিন অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকার বালু তুলছে প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট। এসব বালু জেলার বিভিন্ন স্থানে নির্মাণাধীন স্থাপনা ও খাল ভরাটের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এভাবে বালু উত্তোলন চলতে থাকায় নদী, প্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সঙ্গে নদী তীরবর্তী সেতুসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা হুমকিতে রয়েছে। অবৈধ বালু বাণিজ্যে সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। স্থানীয় সচেতন সমাজের দাবি, তিস্তা নদীতে সরকারিভাবে বালুমহাল তৈরি করে অবৈধ বালু বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। এটা সম্ভব হলে নদীকেন্দ্রিক বালু উত্তোলন থেকেই রাজস্ব আয় দ্বিগুণ হবে।
বিজ্ঞাপন
রোববার (৩০ জানুয়ারি) সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বালু বাণিজ্যের উৎসব। কোনো নজরদারি না থাকায় তিস্তা ও ঘাঘটের বিভিন্ন পয়েন্টে শ্যালোমেশিন বসিয়েছে অসাধু বালু ব্যবসায়ী চক্র। কেউ কেউ আবার শুকনো চর থেকে কোদাল ও বেলচা দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি স্থানে মৎস্য প্রকল্পের নামে চলছে খাল খনন। সেখান থেকে মাটি ও বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর গ্রামের শেখ হাসিনা গঙ্গাচড়া তিস্তা সড়ক সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেতু থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে শ্যালোমেশিন বসিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে শ্যালোমেশিন মালিক ভুট্টু মিয়া বলেন, মসজিদের কাজের জন্য বালু তোলা হচ্ছে। এটা বিক্রি করা হবে না। আমি তো প্রায় ৩ মাস ধরে এখান থেকে বালু উত্তোলন করছি, কেউ তো কিছু বলেনি।
তবে মসজিদ নির্মাণে এত বালু লাগবে কি না জানতে চাইলে কোনো উত্তর দিতে পারেননি তিনি। ভুট্টুর দাবি, উপজেলা প্রশাসনের কাছে অনুমতি নিয়ে তিনি বালু উত্তোলন করছেন। পরে সেখানকার লোকেরা জানায়, ভুট্টু মিয়া বালু ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন ধরে তিনি প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন করে আসছেন।
ভুট্টুর মতো অন্তত ৫০ জন তিস্তা ও ঘাঘট থেকে বালু উত্তোলন করে আসছেন। যাদের বেশির ভাগই বিভিন্নভাবে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে এই অবৈধ ব্যবসা করছে। স্থানীয়দের দাবি, তিস্তা নদী এলাকার মহিপুর তিস্তা ব্রিজের নিচ, মহিপুর, গান্নারপাড়, ধামুর বোল্লারপাড়, দক্ষিণ কোলকোন্দ সিংগীমারী, দক্ষিণ কোলকোন্দ গ্রোইন বাঁধ, দক্ষিণ কোলকোন্দ বাবুপাড়া, পাইকান ব্যাঙপাড়া ও পাইকান পীরপাড়া, উত্তর চিলাখাল, পূর্ব ইচলী ও মধ্য ইচলী এলাকায় বালু উত্তোলন হয়ে থাকে।
অন্যদিকে ঘাঘট নদীর পাইকান ডাক্তারপাড়া, পাইকান চওড়াপাড়া, পাইকান দোলাপাড়া, পাইকান বগুলাগাড়ী, দক্ষিণ পানাপুকুর ফকিরপাড়াসংলগ্ন বাগানবাড়ী, বেতগাড়ী মুন্সিপাড়া ও বেতগাড়ী বালাপাড়া বালু উত্তোলনের উল্লেখযোগ্য পয়েন্ট। এসব ছাড়াও বেশ কয়েকটি স্থানে মৎস্য প্রকল্পের নামে খাল খনন করে মাটি ও বালু বিক্রি করা হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের পরোক্ষ মদদেই অবৈধ বালু ব্যবসা অব্যাহত রয়েছে। এতে জড়িত রয়েছেন স্থানীয় বেশ কিছু প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ী। তাদের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন কিছু রাজনৈতিক নেতাকর্মীও। প্রশাসন সক্রিয় হলে নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করা সম্ভব হতো।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর গঙ্গাচড়া উপজেলা থেকে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি ঘনফুট বালু ও ভিটিবালু উত্তোলন করা হয়। যার ৫৫ শতাংশ তিস্তা এবং ৩০ শতাংশ ঘাঘট থেকে। বাকি ১৫ শতাংশ বিভিন্ন স্থানের মৎস্য প্রকল্পের জন্য খনন করা খাল-বিল থেকে উত্তোলন করা হয়।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নয়ন কুমার সাহা বলেন, গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বালু উত্তোলনের দায়ে পাইকান ডাক্তারপাড়া গ্রামের হামিদুল ইসলামকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করে আসছি। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই