ঠাকুরগাঁওয়ে হাসপাতালে ঢুকে আহত সাংবাদিকদের হত্যার হুমকি
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সেনুয়া ইউনিয়নে নির্বাচনি সহিংসতার সংবাদ সংগ্রহের সময় নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় আহত তিন সাংবাদিককে এবার হাসপাতালে ঢুকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
রোববার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের ৫০৩ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করে স্বরূপ কুমার সেন তন্ময় নামে এক ছাত্রলীগ নেতা তাদের মেরে ফেলার হুমকি দেন। স্বরূপ কুমার রুহিয়া থানা ছাত্রলীগের সদস্য সচিব। তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতেও সাংবাদিকদের নামে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেল ৩টার দিকে সেনুয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী নোবেল কুমার সিংহের সমর্থকদের হামলায় চার সাংবাদিক আহত হন।
আহতরা হলেন- ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি তানভীর হাসান তানু, রাইজিং বিডির জেলা প্রতিনিধি মহিউদ্দিন তালুকদার হিমেল, নিউজ বাংলার জেলা প্রতিনিধি সোহেল রানা এবং ঢাকা মেইলের জেলা প্রতিনিধি জাকির হোসেন মিলু। তাদেরকে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে মিলু প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। অন্যরা এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
স্বজনরা জানান, রোববার বিকেলে হাসপাতালের বেডে শুয়ে ছিলেন আহত সাংবাদিকরা। এ সময় তাদের স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ মুখে মাস্ক ও মাথায় হুডি পরে চোখ-মুখ ঢেকে সেখানে হাজির হন ছাত্রলীগ নেতা স্বরূপ কুমার সেন তন্ময়। তিনি উপস্থিত সবার সামনে আহত সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে বলেন, ‘মামলা করলে পরিণতি ভালো হবে না। বেশি বাড়াবাড়ি করলে এরপর তিনজনের লাশও খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
এ কথা শোনার পর আহত সাংবাদিক তানভীর হাসান তানুর চাচাতো ভাই মাসুম রানা তাকে মাস্ক খুলতে বললে তিনি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। পরে ওই ওয়ার্ডে থাকা অন্য রোগীর স্বজনদের তোপের মুখে পালিয়ে যান স্বরুপ কুমার। পালানোর সময় তার জ্যাকেটের টুপি হাসপাতালের মেঝেতে পড়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ এলে পুলিশকে ওই টুপি বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিক তানভীর হাসান তানুর মা রানী আক্তার বলেন, ‘আমার সাংবাদিক ছেলেরা তো খারাপ কিছু করেনি। তারা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করছে। তাদেরকে মেরেছে আবার এখানে হাসপাতালে এসে হুমকিও দিচ্ছে। ওরা কি এ দেশে বিচার চাইতেও পারবে না? এ কেমন দুঃসাহস, আমার সামনে আমার ছেলেকে হুমকি দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করলে নাকি সাংবাদিকদের লাশ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমি হুমকিদাতা ও হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করার দাবি জানাচ্ছি।’
হাসপাতালের একই ওয়ার্ডের অন্য এক রোগীর স্বজন কুশাল খন্দকার বলেন, ‘হামলার পর মামলা না করতে সাংবাদিকদের হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। এ জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরি।’
অভিযোগ অস্বীকার করে রুহিয়া থানা ছাত্রলীগের সদস্য সচিব স্বরুপ কুমার রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, একই ঘটনায় আমাদের কিছু ছাত্রলীগের কর্মী আহত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন৷ আমি তাদেরকে দেখতে গিয়েছিলাম। পরে আহত সাংবাদিকদের সঙ্গেও দেখা করতে যাই। এ সময় তাদের সঙ্গে সামান্য কথা কাটাকাটি হয়েছে মাত্র। পরে সেখান থেকে চলে আসি৷
ঠাকুরগাঁও সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীরুল ইসলাম জানান, ‘চিকিৎসাধীন সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। হুমকিদাতা ব্যক্তি পালিয়ে যাওয়ায় তাকে আটক করা যায়নি।’
এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রাকাশ করে ঠাকুরগাঁও প্রেস ক্লাবের সভাপতি মনসুর আলী মাসুম বলেন, ‘এ কোন দেশে বাস করছি আমরা? যারা সাংবাদিকদের ওপর হামলা করল, তারা এখনো বুক উঁচিয়ে ঘুরছে। তারা হাসপাতালে এসে সাংবাদিকদের হুমকিও দিয়ে যাচ্ছে। এ সাহস কোথা থেকে আসে?’
এদিকে তিন সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি ঠাকুরগাঁও পুলিশ। ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।
এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানান আহত সাংবাদিকরা।
এম এ সামাদ/আরএআর/জেএস