খতমে নবুওয়াত ইসলামিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা- ছবি: ঢাকা পোস্ট

আদম আলী ঠাকুরগাঁও শহরের কলেজপাড়া এলাকার কৃষক। নিজের জমিতে চাষাবাদ করে চলে তার সংসার। দীর্ঘদিন ধরে নিজ এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০ শতক জমি দিয়ে এতিম শিশুদের জন্য মাদ্রাসা আর গ্রামের মুসল্লিদের জন্য মসজিদ প্রতিষ্ঠা করলেন আদম আলী। মাদ্রাসার নাম দিয়েছেন ‌‘খতমে নবুওয়াত ইসলামিয়া মাদ্রাসা’ আর মসজিদের নাম দিয়েছেন বাইতুল মেরাজ জামে মসজিদ।

ঠাকুরগাঁও শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আদম নগর এলাকার মৃত তসলীম উদ্দীনের ছেলে আদম আলী। কৃষক হয়েও বড় মনের মানুষের পরিচয় দিয়েছেন তিনি। আদম আলীর এই মহৎ কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী। জেলার পাঁচ উপজেলা থেকে আসা ৪০ জন এতিম শিশু পড়াশোনা করছে আদম আলীর প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায়।

ঠাকুরগাঁও শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আদম নগর এলাকার বাসিন্দা আদম আলী- ছবি: ঢাকা পোস্ট

স্থানীয়রা জানায়, এলাকার মানুষের নামাজের সুবিধার্থে ২০১৬ সালে একটি মসজিদ তৈরির চিন্তা মাথায় আনেন আদম আলী। ২০১৮ সালে নিজস্ব জমিতে টিনশেড দিয়ে মসজিদ তৈরি করেন; নাম দেন ‘বাইতুল মেরাজ জামে মসজিদ’। 

২০২১ সালে এতিম শিশুদের কথা চিন্তা করে আবারও মহৎ কাজের উদ্যোগ নেন আদম আলী। গত জানুয়ারি মাসে এতিম শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন মাদ্রাসা। বর্তমানে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪০ জন। এসব এতিম শিশু মাদ্রাসায় থাকবে। তাদের থাকা-খাওয়া ও যাবতীয় সব খরচ বহন করবে মাদ্রাসা কমিটি।

গত ৩ জানুয়ারি বিকেলে মাদ্রাসার উদ্বোধন করেন ঠাকুরগাঁও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ দত্ত সমীর। এরপর থেকে মাদ্রাসার কার্যক্রম শুরু হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা সাব্বির ও জয়নাল আহমেদ জানান, দীর্ঘদিন ধরে আদম আলী আমাদের সঙ্গে এই গ্রামে বসবাস করছেন। জমিতে চাষাবাদ করে সংসার চলে তার। বাড়ি থেকে অনেক দূরে গিয়ে সবাই একসঙ্গে নামাজ পড়তাম। গ্রাম থেকে মসজিদ দূরে হওয়ায় জামাতে নামাজ আদায় করতে পারতাম না। নামাজের সুবিধার কথা চিন্তা করে নিজের জমিতে একটি মসজিদ বানিয়ে দেন আদম আলী। এখন আর কারও নামাজ পড়তে অসুবিধা হয় না।

আদম আলীর প্রতিষ্ঠিত বাইতুল মেরাজ জামে মসজিদ- ছবি : ঢাকা পোস্ট

নতুন করে মসজিদের পাশেই জমি দিয়ে এতিম শিশুদের জন্য মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করলেন আদম আলী। তিনি বড় মনের মানুষ। কৃষক হয়েও উদারতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি প্রমাণ করলেন; যার মন যত বড় তিনি মানুষ হিসেবে তত বড়।

সাব্বির ও জয়নাল আহমেদ বলেন, এলাকাবাসী হিসেবে আমাদের দাবি; আদম আলী মানুষের কথা চিন্তা করে যে মসজিদ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাতে যেন সরকারি অনুদান দেওয়া হয়। সবাই যেন সহযোগিতা করে মাদ্রাসায়। তাহলে এতিম শিশুদের অনেক উপকার হবে।

এতিমখানা মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা হারুনুর রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এতিমখানা প্রতিষ্ঠার মতো মহৎকাজটি করেছেন আদম আলী। এসব এতিম শিশু মানুষের মতো মানুষ হয়ে ইসলাম প্রচার করবে। আজীবন আদম আলী ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া করবে।

এতিম-মিসকিনকে সহযোগিতার কথা আল্লাহ কোরআন মাজিদে বলেছেন। এতিম-মিসকিনের অধিকারের কথা হাদিসেও বলা হয়েছে। ইসলামে বলা আছে, একজন এতিম শিশুর অধিকার সবার আগে দিতে হবে। যখন আমি এই এলাকায় আসি তখন কিছুই ছিল না। ধীরে ধীরে এখানে বসতি গড়ে ওঠে। একটা সময় গ্রাম হয়। গ্রামের সবাই দূরে গিয়ে নামাজ পড়তাম। পরে নিজ উদ্যোগে মসজিদ করি। পরে চিন্তা করি এখানে একটা মাদ্রাসা হলে ভালো হয়। এলাকার অনেক এতিম ছেলে এখানে কোরআন পড়বে, হাদিস শিখবে।

আদম আলী, মসজিদ ও এতিমখানায় জমিদাতা

তিনি বলেন, এখানে মাদ্রাসা হওয়ার ফলে এতিম শিশুরা পড়বে, মানুষের মতো মানুষ হবে। ভাবতেই আমার মনে স্বস্তি আসে। এখন পর্যন্ত ২০ শতক জমি দিয়েছি। যদি এতিম শিশুদের জন্য আরও জমি লাগে আমি দেব। আমি চাই এতিম শিশুরা কোরআন-হাদিস শিখে ইসলাম প্রচার করুক। মানুষের মতো মানুষ হোক।

আদম আলী বলেন, আমি জমি এবং অন্যান্য জিনিস দিয়ে এতিম শিশুদের সহায়তা করব। পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের কাছে আমার আবেদন, আপনারাও এসব এতিম শিশুর দিকে একটু তাকান, আপনারা হাত বাড়ালে অনেক এতিম শিশু এখান থেকে শিক্ষা নিতে পারবে; একদিন এতিমখানা বড় হবে। এসব শিশু আপনার-আমার জন্য দোয়া করবে।

ঠাকুরগাঁও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ দত্ত সমীর, একজন কৃষক নিজ উদ্যোগে একটি এতিমখানা মাদ্রাসা গড়েছেন। এর আগে তিনি একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এতিম শিশুদের জন্য যদি কোনো সহযোগিতা লাগে আমি সহায়তা করব। আমিও চাই, এতিম শিশুরা মানুষের মতো মানুষ হোক।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কৃষক আদম আলীর মহৎ উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। একই সঙ্গে আদম আলী যদি মাদ্রাসার জন্য কোনো ধরনের সহযোগিতা চান তাহলে স্থানীয় প্রশাসন থেকে সহায়তা করা হবে।

মো. নাহিদ রেজা/এএম