রংপুর বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে দুইজন মারা গেছেন। একই সময়ে নতুন করে আর ৪৭৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এক দিনের ব্যবধানে শনাক্তের হার ১১ শতাংশ কমলেও বেড়েছে শনাক্ত। ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ১৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৪১ দশমিক ৮২ শতাংশে।

সোমবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. আবু মো. জাকিরুল ইসলাম।

এর আগের দিন রোববার ৮৪৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত ৪৫১ জন। শনাক্তের হার ছিল ৫৩ দশমিক ৩১ শতাংশ। শনিবার ৫৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৩৮ জন শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ছিল ২৫ দশমিক ৪১ শতাংশ। ওই দিন রংপুর জেলায় করোনা আক্রান্ত একজন মারা গেছেন।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় লালমনিরহাট ও দিনাজপুরে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়াও বিভাগের আট জেলার মধ্যে রংপুরের ১৬০, ঠাকুরগাঁওয়ে ৭৭, দিনাজপুরে ৭৫, নীলফামারীর ৬৫, পঞ্চগড়ের ৩৮, গাইবান্ধার ২৩ জনসহ লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের ২০ জন করে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন।

বিভাগের মধ্যে করোনা শনাক্তের হার পঞ্চগড় জেলায় ৫০ দশমিক ৬৭, ঠাকুরগাঁওয়ে ৫০ দশমিক শূন্য ৩, কুড়িগ্রামে ৫০, নীলফামারীতে ৪৫ দশমিক ৭৭,  দিনাজপুরে ৪৩ দশমিক ৬০, গাইবান্ধায় ৩৮ দশমিক ৮২, রংপুরে ৩০ দশমিক শূন্য ৪, ও লালমনিরহাটে ২৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৭২ জন। বর্তমানে বিভাগে করোনা আক্রান্ত গুরুত্বর ৭৮ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে সংকটাপন্ন ১৩ রোগীকে আইসিইউ-তে রাখা হয়েছে। বাকিদের বাসায় রেখে চিকিৎসা চলছে। পুরো বিভাগজুড়ে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ রয়েছেন ৪ হাজার ৫৫৬ জন রোগী।

পরিচালক আরও জানান, রংপুর বিভাগে করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে দিনাজপুরে। এ জেলায় সর্বোচ্চ আক্রান্ত ১৫ হাজার ৯৩৮ এবং ৩৩৪ জন মারা গেছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বিভাগীয় জেলা রংপুরে। এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৫৪০-তে।

এ ছাড়া জেলা হিসেবে সবচেয়ে কম ৬৩ জন মারা গেছে গাইবান্ধায়। এ জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ১৩৪ জনের। ঠাকুরগাঁওয়ে মৃত্যু ২৫৬ ও শনাক্ত ৮ হাজার ১৭১, নীলফামারীতে মৃত্যু ৮৯ ও শনাক্ত ৪ হাজার ৮৬৪, পঞ্চগড়ে মৃত্যু ৮১ ও শনাক্ত ৪ হাজার ৫৪, কুড়িগ্রামে মৃত্যু ৬৯ ও শনাক্ত ৪ হাজার ৭৬৮ এবং লালমনিরহাট জেলায় মৃত্যু ৭০ ও আক্রান্ত ২ হাজার ৯৪৯ জন।

তিনি জানান, ২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারী শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত বিভাগে মোট ৩ লাখ ১৯ হাজার ১১০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৯ হাজার ৪১৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আট জেলায় মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ২৫৫ জনের। এখন পর্যন্ত বিভাগে সুস্থ হয়েছেন ৫৪ হাজার ৮৬২ জন।

এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে রংপুর বিভাগের দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও লালমনিরহাট জেলাকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বা রেড জোন বলা হয়েছে। এ ছাড়া ইয়েলো জোন বা মধ্যম ঝুঁকিতে রয়েছে রংপুর, কুড়িগ্রাম ও ঠাকুরগাঁও জেলা। দিন দিন করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণে ভারতের কোলঘেঁষা এই বিভাগ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য অধিদফতর।

রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আবু মো. জাকিরুল ইসলাম বলেন, গণটিকাসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষকে টিকার আওতায় আনার ফলে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার আগের চেয়ে কমে আসছে। বর্তমানে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন এবং করোনার ঊর্ধ্বমুখী পরিস্থিতিতে যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে, তা উদ্বেগজনক। তবে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে জনগণকে সচেতন করতে মুখে মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিনা মূল্যে মাস্ক সরবরাহ করা অব্যাহত আছে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই