বল সুন্দরী কুল চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে

দেখতে অনেকটা আপেলের মতো বড়। ওপরের অংশে হালকা সিঁদুর রং। আর খেতে বেশ সুস্বাদু, রসালো এবং মিষ্টি। নাম ‘বল সুন্দরী’ কুল। ইন্ডিয়ান জাতের এই কুল চাষে চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় এবারই প্রথম বল সুন্দরী কুল চাষ করেছেন বিদেশফেরত কৃষক শফিক মিয়া। তিনি উপজেলার আদিত্যপাশা গ্রামের বাসিন্দা। বল সুন্দরী কুল হাসি ফুটিয়েছে তার মুখে।

কিশোরগঞ্জ জেলায় এই প্রথম কোনো কৃষক বাণিজ্যিকভাবে বল সুন্দরী কুল চাষ করেছেন বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি কার্যালয়।

 
সরেজমিন আদিত্যপাশা গ্রামে জানা যায়, গ্রামের মৃত কিতাব আলীর ছেলে শফিক মিয়া নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে  ২০১৬ সালে সৌদি আরব যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে ভালো কাজ না পেয়ে ২০১৮ সালের শেষ দিকে দেশে ফিরে আসেন। চাষাবাদে মন দেন বাবার কৃষি জমিতে। শফিক মিয়া এর আগে কাশ্মীরি কুল চাষ করেছেন। এবারই তিনি প্রথম বল সুন্দরী কুল চাষ করেছেন। 

শফিক মিয়া এক বিঘা জমিতে ২০০টি কুলের চারা রোপণ করেন। রোপণের ছয় মাস পর ফল এসেছে প্রতিটি গাছে। ১৫ থেকে ২০টি কুল এক কেজি ওজন হয়। বাগানেই  ১০০-১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এসব কুল। কীটনাশকমুক্ত ফল হওয়ায় বাগান থেকেই কুল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। এই কুল চাষ করে প্রথম বছরেই ভালো ফলন পেয়েছেন শফিক মিয়া। তাই তিনি আগামীতে আরও বেশি জমিতে কুল চাষ করবেন বলে জানিয়েছেন। আকর্ষণীয় রং ও সাইজ আপেলের মতো হওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এই কুলের।

কৃষক শফিক মিয়া বলেন, উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের পরামর্শে আমি বল সুন্দরী কুল চাষ করেছি। এই কুল চাষে আমার ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ইতিমধ্যে আমি ৭৫ হাজার টাকার কুল বিক্রি করেছি। সব মিলিয়ে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার কুল বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি। আগামী বছরে আমার এ বাগান থেকে আরও অনেক বেশি লাভ হবে। 

তিনি বলেন, অন্য কৃষক ভাইদের বলব, তারাও যেন বল সুন্দরী কুল চাষ করেন। কারণ এই কুল খুব দ্রত ফলন দেয়। এই কুল চাষ করে তারা ভালো লাভবান হতে পারবেন। আমি মনে করি বেকারত্ব দূর করতেও এই কুল চাষ ভূমিকা রাখবে।

একই এলাকার কাশ্মীরি কুলচাষি মো. উজ্জল বলেন, আমি অনেকটা শখের বসে কাশ্মীরি কুল  চাষ করেছি। এখন আমার গাছে ফলন আসছে। ফল পেকে গেছে। এখন পর্যন্ত আমি সাত হাজার টাকার কুল বিক্রি করেছি। এই কুলের অনেক চাহিদা। কারণ তা কীটনাশকমুক্ত। যে কুল আমার বাগানে হয়েছে তা বাজারে নেওয়ারও সুযোগ হয় না। বাগান থেকেই নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা।

বাগানেই  ১০০-১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এসব কুল

আরেক কাশ্মীরি কুলচাষি মো. ইকবাল হোসেন বলেন, আমি একটি বেসরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। করোনাকালে কুল চাষ করেছি। এই কুল বিক্রি করে বেশ লাভবান হব বলে আশা করছি। কিছুদিনের মধ্যে আমার বাগানের কুল পরিপক্ব হবে।

উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হামিমুল হক সোহাগ বলেন, বল সুন্দরী কুলের আকৃতি তুলনামূলক অনেকটা বড়। খেতেও সুস্বাদু এবং বাজারমূল্যও ভালো। ফলে বল সুন্দরী কুল কৃষকের কাছে জনপ্রিয় জাত হিসেবে পরিণত হয়েছে। রোপণের ছয় মাস পর থেকেই ফল পাওয়া যায়। যা বিক্রি করে বাগান স্থাপনের খরচ ওঠানোসহ লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিশোরগঞ্জ জেলায় এই প্রথম বল সুন্দরী কুল চাষ করেছেন বিদেশফেরত যুবক শফিক মিয়া। এ ছাড়া মো. উজ্জল, মো. ইকবাল হোসেন, মো. আনোয়ারুল ইসলাম ও মো. রুবেল  মিয়া পাঁচ বিঘা জমিতে কাশ্মীরি কুল চাষ করেছেন। যা থেকে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা।

আরএআর/এনএ