সকাল ৮টা। তখনও শীতের তীব্রতা কাটেনি। বইছে হিমেল বাতাস, সঙ্গে কুয়াশাচ্ছন্ন প্রকৃতি। অনেক ভোটকেন্দ্রই ফাঁকা। কিন্তু ঘণ্টা দুয়েক পর ফাঁকা মাঠে ভরতে থাকে। দীর্ঘ হতে থাকে ভোটারদের লাইন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোট উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে বাইরে সবখানেই ভোটারদের দৃষ্টি কাড়তে ব্যস্ত প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা।

সোমবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্র ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে। যদিও কিছু কিছু কেন্দ্রে ইভিএম মেশিনের (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ধীরগতির কারণে ভোটারদের বিড়ম্বনার অভিযোগ উঠেছে।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার ভাংগী ইউনিয়নের বেতগাড়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন ভোটাররা। শীত ও কুয়াশার কারণে দেরিতে কেন্দ্রে আসা এসব ভোটারদের অভিযোগ- ইভিএম মেশিনের ধীরগতির কারণে ভোট দিতে বিলম্ব হচ্ছে।

রনজিনা বেগম নামে এক নারী ভোটার জানান, সকাল সোয়া ৯টায় কেন্দ্রে এসেছেন। এখন পর্যন্ত (সাড়ে ১১টা) ভোট দিতে পারেননি। 

ওই কেন্দ্র থেকে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন মজিতন নেছা নামে নব্বই বছর বয়সী বৃদ্ধা। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘ভোটতো ভালোয় হওছে, কিন্তুক মেশিন স্লো। মুই বুড়ি মানুষ দেকি আগোত ভোট দিনু। কিন্তুক মোর সাথে আইসা বেটার বউ দুকন্যা অ্যালাও লাইনোত দাঁড়ে আছে। ওমরা ভোট দিলে তারপর বাড়ি যাইম।’

বেতগাড়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২ হাজার ৩৮ জন ভোটার। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দাবি, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে। এখন পর্যন্ত ইভিএমের যান্ত্রিক কোনো সমস্যা হয়নি। তবে অনেকের হাতের অঙ্গুলের ছাপ নিয়ে জটিলতা হওয়ায় বাড়তি সময় লাগছে। এটা সবার ক্ষেত্রে হচ্ছে না।  

একই ইউনিয়নের হুলাশুগঞ্জ দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টার সময় দুই তরুণ ভোটারকে আটক করেছে পুলিশ। আটকরা হলেন- রাধানগর গ্রামের সুলতান মিয়ার ছেলে হাবিবুর রহমান শাওন (২০) ও একই গ্রামের আনোয়ারুল ইসলামের ছেলে রাকিবুল ইসলাম (২১)। এই দুজন আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কর্মী বলে জানা গেছে।

এছাড়া এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ চলছে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতি ছাড়াই ১৭২টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। এসব কেন্দ্রের এক-তৃতীয়াংশকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখানে নিরাপত্তার জন্য নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সপ্তম ধাপের ইউপি নির্বাচনে মিঠাপুকুরে ৪ লাখ ১৮ হাজার ৯৪১ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। যার মধ্যে নারী ভোটারের সংখ্যা পুরুষের তুলনায় ৩ হাজার ৮৫ জন বেশি। উপজেলার ১৭ ইউপির ২২১টি পদের বিপরীতে ১ হাজার ১৯২ প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে ১২৯ চেয়ারম্যান, ৭৭৩ সাধারণ সদস্য ও ১৯০ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থী রয়েছে।

শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট নিতে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ ও আনসার-ভিডিপির মোট ৩ হাজার ৭৭০ সদস্য ভোটের মাঠে রয়েছেন। ঝুঁকিপূর্ণ ৬০ কেন্দ্রে ছয়জন করে পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে তিনটি ভ্রাম্যমাণ ও একটি করে স্ট্রাইকিং টিম নিয়োজিত রয়েছে।  

উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের সবগুলোতে দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিক চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। এক সময়ের লাঙ্গলের ঘাঁটিখ্যাত মিঠাপুকুরে জাতীয় পার্টি মাত্র পাঁচটি ইউনিয়নে প্রার্থী দিয়েছে। দলীয় প্রতীকে না হলেও প্রতিটি ইউনিয়নে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীও রয়েছেন। ইসলামী আন্দোলন, জাসদ, বাসদ ছাড়াও  আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির দলীয় মনোনয়নবঞ্চিতরা স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর