শেরপুর জেলা শহর একসময় জমিদারদের শাসনে ছিল। জমিদারদের সন্তানসন্ততি ও এলাকার কোমলমতী সন্তানদের শিক্ষিত করার উদ্দেশ্যে জি কে পাইলট উচ্চবিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯১৯ সালে তৎকালীন জমিদার গোবিন্দ কুমার চৌধুরী গোটা বিদ্যালয় তার পছন্দের নকশায় নির্মাণ করেন।

ব্রিটিশ ধারায় নির্মিত প্রতিষ্ঠানটিতে পাঠদানের জন্য অনেকগুলো কক্ষ, তিনটি উঁচু ভবন ও সুপ্রশস্ত জানালা রয়েছে। বিদ্যালয়টির মূল বিশেষত্ব হলো, এটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যে এর যেকোনো দিক থেকে তাকালেই নির্মাণশৈলী একই রকম দেখা যায়।

ইটের গাঁথুনি দিয়ে পুরো ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটা দেয়াল সুবিশাল। যার ইটের ব্যবহার পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য এর সামনে একটি পুকুর খনন করা হয়েছিল। যেখানে ইট দিয়ে তৈরি সিঁড়িসহ পুকুরঘাট বিদ্যালয়ের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়েছে। পুকুরের পূর্ব পাশে রয়েছে একটি লেক এবং চারপাশে গাছপালাবেষ্টিত, প্রবেশপথে রয়েছে একটি বিশাল গেট।

তৎকালীন জমিদার গোবিন্দ কুমার চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করায় তার নামানুসারে এটির নামকরণ করা হয় “গোবিন্দ কুমার পাইলট স্কুল”। তার সংক্ষিপ্ত রূপ দেওয়া হয় জি কে পাইলট উচ্চবিদ্যালয়।

জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র পৌর পার্ক-সংলগ্ন ও শেরপুর থেকে জামালপুর যাতায়াত করার রাস্তার পশ্চিম পাশে দাঁড়িয়ে আছে বিদ্যালয়টি। তার পূর্ব পাশে রয়েছে জেলা স্মৃতিসৌধ এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমি। বিদ্যালয়টির দক্ষিণ-পূর্ব পাশে রয়েছে শহীদ দারোগআলি স্টেডিয়াম।

বিদ্যালয়টি শহরের প্রাণকেন্দ্রে হওয়ায় প্রতিবছর কয়েকটি বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা এখানে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে থাকে। এখানে প্রায় ১ হাজার শিক্ষার্থী একত্রে পাঠ গ্রহণ করতে পারে। বিদ্যালয়টিতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। এ ছাড়া ফলাফল, ক্রীড়া ও কৃতিত্বের দিকেও এটি সব সময় প্রথম সারিতে থাকে।

নাগরিক সংগঠন জন-উদ্যোগের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, শতবর্ষী এ বিদ্যালয়টি শেরপুর জেলার শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। জমিদার গোবিন্দ কুমার কর্তৃক জিকে পাইলট উচ্চবিদ্যালয়টি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম স্মারক। ইতিহাস থেকে আমরা জেনেছি, অতীতে এই বিদ্যালয়ে লক্ষাধিক বইয়ের লাইব্রেরি ছিল। বর্তমানেও এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি জেলার অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ।

এ বিষয়ে জি কে পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যালয়টি শিক্ষার প্রসারে অন্যতম ভূমিকা পালন করে আসছে। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা অনেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী এখন বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। প্রতিষ্ঠানটি গৌরবের সঙ্গে এত বছর পাড়ি দিয়ে আজও সুনামের সঙ্গে এগিয়ে চলছে।

জি কে পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে আছেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিক। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন ১ হাজারের অধিক ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়নরত। এ ছাড়া ৩০ জন শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়ে সুন্দরভাবে বিদ্যালয়টি পরিচালিত হচ্ছে। এ বিদ্যালয়ের প্রাথমিক সমাপনী, জেএসসি ও এসএসসিতে শতভাগ পাস রয়েছে।

শেরপুরের জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যর অন্যতম নিদর্শন জি কে পাইলট উচ্চবিদ্যালয়টি ব্রিটিশ ধারায় নির্মিত। এটির নির্মাণশৈলী অনেকটা যশোরের খান জাহান আলী জামে মসজিদের মতন। কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির যেদিকে তাকানো হয়, সব একই রকম মনে হবে। শেরপুর জেলার এই ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারের কাছে আবেদন রাখব।

এনএ