শরণ শীলের স্ত্রী তৃষ্ণার কোলে ২৬ দিনের কন্যাশিশু। এই অবুঝ শিশু জানে না তার বাবা আর নেই। বাবার ইচ্ছে ছিল বড় করে মেয়ের ষষ্ঠীর অনুষ্ঠান করবেন। সে কারণে বেতন থেকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে আংটিও কিনেছিলেন। কিন্তু সে আশা আর পূরণ হলো না। 

শরণশীলের বাবা অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী সুরেশচন্দ্র পরলোক গমন করেন তার মেয়ের ষষ্ঠী অনুষ্ঠানের পাঁচ দিন আগে। বাবার মৃত্যুতে  পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। সে সময় ষষ্ঠীর অনুষ্ঠান পিছিয়ে দেওয়া হয়। এই পিছিয়ে দেওয়ায় যে শরণশীলের শেষ দিন হবে তা স্ত্রী তৃষ্ণা কল্পনাও করতে পারেননি।

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে দেখা যায়, শরণশীলের স্ত্রী তৃষ্ণা বিলাপ করতে করতে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। স্বজনরা কেউ তার মাথায় পানি ঢালছিলেন, কেউ হাত-পা ম্যাসাজ করে গরম করার চেষ্টা করছিলেন। জ্ঞান ফিরতেই আবারও কেঁদে উঠছিলেন। 

প্রসঙ্গত, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজরা ইউনিয়নের সগীর শাহ কাটা গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী সুরেশচন্দ্র মারা যান ১০ দিন আগে। মঙ্গলবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অংশ হিসেবে মাথা মোড়ানোর জন্য যান তার সন্তানরা। এই কাজের জন্য তারা মহাসড়কের পূর্ব পাশের বনে গিয়েছিলেন। কাজ শেষে মালুমঘাটের হাসিনা পাড়া এলাকায় রাস্তার পার হচ্ছিলেন তারা। এ সময় কক্সবাজারমুখী পিকআপভ্যান দ্রুতগতিতে এসে তাদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান নিরুপম, অনুপম, দীপক ও চম্পক শীল।

আহত অবস্থায় মালুমঘাট ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন চারজন। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শরণ শীল। 

প্রত্যক্ষদর্শী প্লাবন ঘটনার পর থেকে পাগলপ্রায়। তিনি এবার ডুলাহাজরা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। চার-পাঁচজন স্বজন ও বন্ধু তাকে শান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি অপরিচিত যাকে সামনে পাচ্ছেন তার দিকেই তেড়ে আসছেন। পুলিশ, সাংবাদিক ও রাজনীতিক সবাইকে এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করছেন। এই প্রতিবেদক তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। বলেন, এখন লিখে কী হবে? এটি খুন। চলে যান এখান থেকে। তার পাশেই নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন মা মানু রানী (৬৫)।

সাইদুল ফরহাদ/এসপি