নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মেহরাজ উদ্দিনসহ ৪ জনকে জেলেদের চাল আত্মসাতের মামলায় ১০ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করেছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের ৭০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নোয়াখালীর স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক এএনএম মোর্শেদ আলম এ রায় প্রদান করেন।

আসামিরা হলেন- ১১ নং নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মেহেরাজ উদ্দিন, জাহাজমারা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. গোলাম ফারুক, নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তাহেরা বেগম ও ছকিনা খাতুন শাহানারা।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৬ মে হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নে দরিদ্র জেলেদের মাঝে ভিজিএফ এর চাল যথাযতভাবে বিতরণ না করে ৩১.১২ মেট্রিক টন চাল আত্মসাৎ করার অভিযোগে হাতিয়া থানার নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সচিব ছিদ্দিক আহম্মেদ জুয়েল বাদী হয়ে মামলা করেন। পরে মামলাটি তদন্ত করেন দুদকের নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মশিউর রহমান। 

অভিযোগে বলা হয়, নিঝুম দ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যানসহ অপর তিন আসামি জাটকা আহরণকারী হত দরিদ্র ৩৮৯ জন জেলে প্রত্যেকের জন্য মার্চ ২০১৬ হতে জুন ২০১৬ পর্যন্ত ৪ মাসে ১৬০ কেজি হারে বিতরণের জন্য মোট ৬২ দশমিক ২৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তারা অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনা না করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে উপজেলা কমিটির অনুমোদিত তালিকার দরিদ্র ভিজিএফ জেলেদের নামীয় চাল যথাযথভাবে বিতরণের দায়িত্বে থেকে কম পরিমাণে বিতরণ করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তালিকাভুক্তদের না দিয়ে ভুয়া মাস্টার রোল তৈরি ও স্বাক্ষর করে দাখিল করেন। তদন্তকালে সাক্ষীগণের জবানবন্দি দ্বারা গড়ে অর্ধেক চাল বিতরণ না করার প্রমাণ পাওয়া যায়। তারা ৩১ দশমিক ১২ মেট্রিক টন চাল বিতরণ না করে আত্মসাৎ করে। 

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, হাতিয়া উপজেলা থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে হত দরিদ্র (ভিজিডি) মহিলাদের চাল বিতরণে খাদ্যশস্য ছাড়করণ পত্র মোতাবেক ১১ নং নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের ১১৯ জন কার্ড ধারী ভিজিডি মহিলাদের নিকট বিতরণের জন্য ২১ দশমিক ৪২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তারা অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনা না করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে উপজেলা কমিটির অনুমোদিত তালিকার ভিজিডি মহিলাদের নামীয় চাল কম পরিমাণে বিতরণ করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তালিকাভুক্তদের না দিয়ে ভুয়া মাস্টার রোল তৈরি ও স্বাক্ষর করে দাখিল করেন। তদন্তকালে সাক্ষীগণের জবানবন্দি দ্বারা গড়ে অর্ধেক বিতরণ না করে ১০ দশমিক ৭১ মেট্রিক টন চাল বিতরণ না করে আত্মসাৎ করা হয়।

হাতিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সচিব ছিদ্দিক আহম্মেদ জুয়েলের মামলায় চার আসামিকে ১০ বছরের সাজা ও ৭০ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন আদালত।

নিঝুম দ্বীপ ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল আফছার দিনাজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এভাবে জেলেদের চাল আত্মসাৎ করা উচিত হয়নি। উনি যে কর্ম করেছেন তার ফল পেয়েছেন। নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নটি খেটে খাওয়া মানুষের ইউনিয়ন।

হাসিব আল আমিন/আরআই