কক্সবাজারের চকরিয়ায় বেপরোয়া গতির পিকআপ ভ্যানচাপায় একসঙ্গে ৫ ভাই নিহত হওয়ার ঘটনায় রাস্তায় অধিক কুয়াশা থাকা সত্ত্বেও চালক দ্রুত কক্সবাজার পৌঁছে সবজি ডেলিভারি দেওয়ার জন্য বেপরোয়াভাবে পিকআপটি চালাচ্ছিলেন।

অধিক কুয়াশা ও অতিরিক্ত গতির কারণে মালুমঘাট বাজারের নার্সারি গেটের সামনে রাস্তা পার হওয়ার জন্য অপেক্ষারতদের দূর থেকে লক্ষ্য করেননি। গাড়ির অধিক গতি থাকার কারণে কাছাকাছি এসে লক্ষ্য করলেও গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারায় দুর্ঘটনাটি ঘটে।

শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেফতারের পর শনিবার (১২ জানুয়ারি) র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, গ্রেফতার সাইফুল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, সেদিন ভোরে আনুমানিক ৫টার দিকে পিকআপ মালিকের ছেলে তারেক ও ভাগিনা রবিউলসহ তারা চকরিয়া থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে সবজিবোঝাই পিকআপ নিয়ে রওনা করেন। দুর্ঘটনার পর সাইফুল নিহতদের দেখতে নামলেও মালিকের ছেলে তারেকের নির্দেশে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।

তিনি আরও বলেন, চালক সাইফুল দাবি করেন, সেদিন ভোরে সড়কে অতিরিক্ত কুয়াশা ছিল। গাড়ির গতিও ছিল ৬০ থেকে ৬৫। গতি আর কুয়াশায় নিয়ন্ত্রণহীন ছিল পিকআপটি। সামনে মানুষ দেখেই থামানো সম্ভব হয়নি। নিজের অনিচ্ছাকৃত কারণে গাড়ি উঠিয়ে দেন পুরো পরিবারের ওপর। এতে মৃত্যু হয় পাঁচ সহোদরের। আহত হন আরও একজন।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ( ৮ ফেব্রুয়ারি) ভোরে কক্সবাজারের চকরিয়ার মালুমঘাটে পিকআপচাপায় একই পরিবারের চার ভাই অনুপম সুশীল (৪৬), নিরুপম সুশীল (৪০), দীপক সুশীল (৩৫) চম্পক সুশীলের (৩০) ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় অপর সহোদর স্বরণ সুশীলের (২৪)।

এ দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে আহত হন তাদের সহোদর ভাই রক্তিম সুশীল ও বোন হীরা সুশীল। বর্তমানে রক্তিম সুশীল চট্টগ্রাম মহানগরীর একটি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন।

এর ১০ দিন আগে তাদের বাবা ডুলাহাজরা ইউনিয়নের সগীর শাহ কাটা গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী সুরেশচন্দ্র মারা যান। মঙ্গলবার তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অংশ হিসেবে মাথা মোড়ানোর জন্য যান তার সন্তানরা। এই কাজের জন্য তারা মহাসড়কের পূর্ব পাশের বনে গিয়েছিলেন। কাজ শেষে মালুমঘাটের হাসিনা পাড়া এলাকায় রাস্তার পার হচ্ছিলেন তারা। পথে ঘটে এ মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা।

পরে ওই ঘটনায় নিহতদের ভাই প্লাবন সুশীল (২২) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা পিকআপচালককে আসামি করে কক্সবাজারের চকরিয়া থানায় সড়ক পরিবহন আইনের ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। র‌্যাব জড়িতদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে দেয়।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব সদরদপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৫ এর অভিযানে শুক্রবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ঘাতক পিকআপের চালক সহিদুল ইসলাম ওরফে সাইফুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বান্দরবানের লামার আলী জাফরের ছেলে।

সাইদুল/এনএ