রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় সপ্তম ধাপে দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের মারুফা আকতার মিতু। অবহেলিত শিখণ্ডী জনগোষ্ঠী থেকে উঠে আসা এই নারী ইউপি সদস্য সরকারি সব বরাদ্দ গরিব-মেহনতি মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত ইউপি সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়েছেন মারুফা আকতার মিতু। ওই ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য পদে আরও তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সংরক্ষিত সদস্য পদে তৃতীয় লিঙ্গের মারুফা আক্তার মিতু মাইক প্রতীকে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৫৮০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রহিমা বেগম বই প্রতীকে পেয়েছেন ৩ হাজার ৬৫৩ ভোট। অন্য প্রার্থী প্রভাতী রানী কলম প্রতীকে ৮৬৮ ও শাহজাদী বেগম হেলিকপ্টার প্রতীকে ৫৯৪ ভোট পেয়েছেন।

ঢাকা পোস্টকে বিজয় আনন্দের অনুভূতি প্রকাশ করে মারুফা বলেন, মানুষ স্বপ্ন দেখে, আমিও স্বপ্ন দেখেছিলাম। সমাজের অবহেলিত সাধারণ মানুষের মতোই কাজ করব। এটা আমার দীর্ঘদিনের সাধনা ছিল। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে নিজের একটা ভালো অবস্থানের প্রয়োজন ছিল। কারণ আমি তো একটা অবহেলিত জনগোষ্ঠী থেকে উঠে এসেছি।

তিনি আরও বলেন, এলাকার সাধারণ মানুষ আমাকে ভালোবাসে। সব সময় আমি তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। গ্রামের মানুষের বিপদে আপদে ছুটে গিয়েছি। স্থানীয়দের প্রত্যাশা পূরণে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু সবাই যে আমাকে এত বেশি ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে, এটি আমি ভাবতেও পারিনি।

মারুফা জানান, তার জীবনে কোনো কিছু চাওয়া নেই। তার কোনো আত্মীয় স্বজনও নেই। এলাকার মানুষ আর তার জনগোষ্ঠীর সবাই তার আপন। দায়িত্ব পালনকালে সরকারি যা কিছু বরাদ্দ পাবেন, সবই গরিব মেহনতি মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেবেন। কাউকে কষ্ট দেবেন না, কারো হক নষ্ট করবেন না। সরকারি সব বরাদ্দ গরিব মেহনতি মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেবেন, এটাই তার ওয়াদা।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের লোকজন মূল সমাজে ধীরে ধীরে মিশে যাচ্ছে। বিজয়ী মারুফা আকতার মিতুর এলাকায় ব্যাপক পরিচিতি। সাধারণ মানুষের কাছে তার ভালো গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ভোটের আগ থেকে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে প্রত্যেক ঘরে ঘরে মারুফা তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন। আমার মনে হয়, এ কারণেই এলাকার মানুষ ভালোবেসে তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই