সাভারে খুন-গণধর্ষণে কিশোর গ্যাং
কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য
সাভারে দিন দিন কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। সংঘবদ্ধ ধর্ষণসহ হত্যা করতেও এদের হাত কাঁপছে না। অপরাধ করার পর গ্রেপ্তার হলেও কমছে না এদের দৌরাত্ম্য। গত ৬ মাসে সাভারে এ দলের হাতে ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন তিনজন এবং গণধর্ষণের শিকার হয়েছে কিশোরী পোশাক শ্রমিক।
সাভার ও আশুলিয়ায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এরা বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে বলে জানা গেছে। কিশোর বয়সেই তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ও নেশায় বুদ হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে অপরাধ জগতে।
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশুলিয়ার ভাদাইল, সাভারের রাজফুলবাড়িয়া, জামসিংসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠছে কিশোর গ্যাং। এদের ছুরিকাঘাতে শিক্ষার্থী নিলা, টাইলস মিস্ত্রি মিলন ও আশুলিয়ার ভাদাইলে গণধর্ষণের শিকার হয় কিশোরী পোশাক শ্রমিক। সবশেষে এ গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে নিহত হন রোহান নামে এক শিক্ষার্থী।
গণধর্ষণে প্রিন্স গ্যাং
বিজ্ঞাপন
সাভারের আশুলিয়ার ভাদাইল এলাকায় জুলাই মাসে প্রতিবেশী ভাতিজি ও তার বান্ধবীসহ উত্তর পবনারটেক এলাকায় ঘুরতে যায় চার পোশাক শ্রমিক। এ সময় কিশোর গ্যাংয়ের ১০ থেকে ১২ জন সদস্য তাদের নিজর্ন স্থানে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায়। কিশোরী ও প্রতিবেশী চাচাদের পৃথক স্থানে বেঁধে মারধর করে। এক পর্যায়ে এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ করে। ঘটনার
এক মাস পর ভিডিওর স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গ্যাংয়ের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
কিশোর গ্যাংয়ের হাতে ৩ খুন
নীলা হত্যা :
গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে নীলা রায় ও তার ভাই অলক রায়ের পথরোধ করে বখাটে মিজানুর রহমান। পরে তার ভাইয়ের কাছ থেকে নীলাকে ছিনিয়ে নিয়ে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। রাতে তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় নীলার বাবা নারায়ণ রায় ২১ সেপ্টেম্বর মিজানুর রহমান, তার বাবা আব্দুর রহমান ও মা নাজমুন নাহার সিদ্দিকাসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে সাভার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় মিজানুরসহ তার বাবা মাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মিলন হত্যা :
৩ ডিসেম্বর সাভার পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ জামসিং এলাকার একটি পুকুর পাড়ে মিলন (২০) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। নিহত মিলন একই এলাকার ফজলুল হকের ছেলে। তিনি টাইলস মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
রোহান হত্যা :
প্রেমঘটিত বিরোধের জেরে শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রোহান (১৭) নামে এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।
নিহতের স্বজন আকাশের দেওয়া তথ্য মতে, রোহান একটি মেয়েকে ভালবাসত। তাকে উত্ত্যক্ত করত কয়েকজন বন্ধু। এর মধ্যে ব্যাংক কলোনির হৃদয় এবং শুভ নামে দুইজন রোহানকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে রোহান তার চাচাতো ভাই আকাশসহ চার বন্ধু সাভারের ব্যাংক কলোনি এলাকায় যায়। মোটরসাইকেল থেকে নামতেই হৃদয় ও শুভ হামলা চালায়।
হৃদয় ও শুভসহ প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন আগে থেকেই পরিকল্পনা করে ওঁৎ পেতে ছিল। হাতাহাতির এক পর্যায়ে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় তারা। পরে ভোরে ধামরাইয়ের এক আত্মীয়র বাড়ি থেকে কিশোর গ্যাং লিডার হৃদয়কে আটক করে পুলিশ। আটক হৃদয় (১৭) সাভার সদর ইউনিয়নের মল্লিকার টেক এলাকার ঝন্টু মিয়ার ছেলে।
সাভার মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রেম সংক্রান্ত বিরোধের জেরে রোহানকে হত্যা করেছে হৃদয় ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনায় হৃদয়কে আটক করা হয়েছে। অন্যান্যদের আটকের চেষ্টা চলছে।
আশুলিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি লায়ন মোহাম্মদ ইমাম বলেন, পারিবারিক উদাসীনতায় এ ধরনের গ্যাংয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। পারিবারিক মনিটরিং বাড়ালেই এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে বলে আমার বিশ্বাস।
মাহিদুল মাহিদ/এসপি