সাতক্ষীরায় ইউনানি ওষুধ উৎপাদন বিষয়ক কর্মশালায় নাম-ঠিকানা ছাড়াই ২০০ জনকে সনদপত্র দেওয়া হয়েছে। প্রতি সনদের জন্য নেওয়া হয়েছে ৩০০-৭০০ টাকা।  বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে সাতক্ষীরা শিল্পকলা একাডেমিতে ‘গুণগতমানসম্পন্ন ওষুধি উদ্ভিদ, নিরাপদ ইউনানি ওষুধ উৎপাদনের প্রধান শর্ত’ শীর্ষক এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন মেডিসিনাল প্লান্টস অ্যান্ড হারবাল প্রোডাক্টস বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ ইউনানি ওষুধ শিল্প সমিতির যৌথ উদ্যোগে এ কর্মশালার আয়োজন করে। 

সাতক্ষীরা জেলার সাতটি উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত ও পার্শ্ববর্তী যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলা থেকে আগত অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে অংশগ্রহণের জন্য প্রত্যেককে টাকা দিতে হয়েছে। তারা সবাই কম-বেশি ইউনানি চিকিৎসায় কাজ করেন। ২০০ অংশগ্রহণকারীর কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন সাতক্ষীরা জেলা ইউনানি ডক্টরস সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলামসহ সংগঠনটির জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ। তাদেরকে বলা হয়েছে, ক্যালেন্ডার, সনদ, ওষুধ, ক্রেস্ট ও খাবার দেওয়া হবে।

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা থেকে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার কাছ থেকে সনদপত্র ও ক্রেস্ট দেওয়ার নাম করে ৬৫০ টাকা নিয়েছে। এর থেকে বেশি কিছু জানি না। 

দেবহাটা উপজেলা থেকে আগত ইউনানি চিকিৎসক মো. সামছুদ্দীন ফকির বলেন, আমি দাওয়াত পেয়ে কর্মশালায় এসেছি ও ৬০০ টাকা প্রদান করেছি। তারা আমাকে ইউনানি চিকিৎসা বিষয়ক কর্মশালার সনদপত্র ও ক্রেস্ট দেবে বলে জানিয়েছে।

এদিকে জেলা শিল্পকলা একাডেমি হল রুমে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে কর্মশালা। শেষে দেওয়া হয় খাবার, একটি ক্যালেন্ডার ও নাম ঠিকানা বিহীন একটি সনদপত্র। তবে সনদপত্রে স্বাক্ষর রয়েছে বাংলাদেশ ইউনানি ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি ডা. সাঈদ আহমেদ সিদ্দিকী ও বাংলাদেশ সচিবালয়ের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের কো-অর্ডিনেটর মো. আব্দুর রহিম খানের।

বাংলাদেশ ইউনানি ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি ড. সাঈদ আহমেদ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা কার্যালয়ের ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক মীর আব্দুর রাজ্জাক।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হারবাল প্রডাক্ট বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও ইবনে হায়সাম ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন বাদল, বাংলাদেশ ইউনানি ডক্টরস সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক হাকীম রেজাউল করিম, আশরাফুল ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল ইসলাম লিটন, বাংলাদেশ ইউনানি ডক্টরস সোসাইটির সহসভাপতি মুন্সি দারুল ইসলাম, আনোয়ারুল আলম ভূঁইয়া, টোটাল ন্যাচারাল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুন্সি দারুল ইসলাম, সাতক্ষীরার বিশিষ্ট শিল্পপতি ডা. আবুল কালাম বাবলা।

অনুষ্ঠান শেষে শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে হতাশা প্রকাশ করতে দেখা যায় অংশগ্রহণকারীদের। তারা বলেন, ব্যাগ ও ওষুধ দেওয়ার কথা ছিল, সেটি তারা দেয়নি। সনদপত্রে কারও নাম ঠিকানা নেই। আবার কেউ কেউ সনদপত্র পাননি। 

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলনকারী হাকীম মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, কর্মশালাটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে ফি বাবদ ৩০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। বাড়তি টাকা কারো কাছ থেকে নেওয়া হয়নি। 

তবে টাকা দেওয়া একজন মুখোমুখি হলে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন আমিরুল ইসলাম। এ সময় বাংলাদেশ ইউনানি ওষুধ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক হোসেন বলেন, কারও কাছ থেকে কোনো টাকা উত্তোলন করার কথা নয়। সদস্য ফি বাবদ ৩০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। সেটা ঠিক আছে, তবে বেশি নিলে ঠিক হয়নি। 

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সাতক্ষীরা জেলা কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক (ওষুধ ) মীর আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কে টাকা নিয়েছে আমি জানি না। এটার যারা আয়োজক তারা বলতে পারবেন। 

আকরামুল ইসলাম/আরআই/আরএআর