টিকা নিচ্ছেন রসিক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা

‘টিকা নিয়ে অন্য রকম ভালো লাগছে। নিজেকে সুরক্ষিত মনে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। আগে মনের মধ্যে যে ভয় ছিল, টিকা নেওয়ার পর তা কেটে গেছে। কোনো সমস্যা নেই, টিকা নিয়ে ভালো আছি।’ করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নেওয়ার পর এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন রংপুুুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।

রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০ টায় সারাদেশের মতো রংপুরেও শুরু হয়েছে করোনাভাইরাসের টিকা প্রদান কার্যক্রম। 

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা প্রথমে টিকা গ্রহণ করে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এরপর একে একে রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আহাদ আলী, রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. একেএম নূরুন্নবী লাইজু, জেলা সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার রায়, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছাফিয়া খানম, সিনিয়র সাংবাদিক আফতাব হোসেনসহ রংপুরের কর্মরত সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা টিকা নেন।

একই সময়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। জেলার প্রতিটি উপজেলায় প্রথম দিনে ১০০ জন করে করোনার টিকা দেওয়া হবে। এছাড়া রংপুর সদর ও মহানগর এলাকার ৮০০ জনকে টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। 

টিকা গ্রহণ করে সাংবাদিকদের কাছে জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, টিকা নিয়ে সুরক্ষিত হলাম। আমি মনে করি, সুরক্ষিত থাকতে প্রত্যেকেরই টিকা নেওয়া দরকার। করোনার টিকা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল। আজকের পর আর তা থাকবে না। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে সবাই টিকা গ্রহণ করছে। এজন্য সরকারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।

এদিকে, রংপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার রায় বলেন, করোনা ভাইরাসের টিকা নেওয়ার জন্য শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাত পর্যন্ত ৮ হাজারের বেশি লোক নিবন্ধিত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫০০ জন চিকিৎসক রয়েছেন। তবে অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন কার্যক্রম চলমান থাকায় এই সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। 

তিনি আরও বলেন, রংপুর জেলার প্রত্যেকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০০ জন করে এবং রংপুর সদরসহ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৮০০ জনসহ প্রথম দিনে মোট ১৫০০ জনকে টিকা প্রদানের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে টিকা দেওয়া হবে। এজন্য জেলার প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি করে সাতটি এবং রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮টি মোট ১৫টি বুথ তৈরি করা হয়েছে।

স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, মুক্তিযোদ্ধা, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে টিকা দেওয়ার কাজে নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ভ্যাকসিন পেতে অনলাইনে সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে না।

রোববার (৩১ জানুয়ারি) সকাল ৬টার দিকে ভ্যাকসিনবাহী বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ফ্রিজার ভ্যানটি জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পৌঁছায়। সেখানে ২ লাখ ৪ হাজার ডোজ টিকা রয়েছে। ঢাকা থেকে ফ্রিজার ভ্যানে করে পাঠানো টিকার ১৭টি কার্টন কোল্ড চেইন মেইনটেইন করে জেলা ইপিআই স্টোরের আইএলআর ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রতি কার্টনে এক হাজার ২০০ ভায়াল এবং প্রতি ভায়ালে ১০টি করে ডোজ রয়েছে। 

প্রসঙ্গত, গত ২৭ জানুয়ারি দেশে প্রথম করোনা টিকা প্রদান শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। সেদিন টিকা নিতে নিবন্ধনের জন্য ‘সুরক্ষা’ নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করা হয়। দেশে বর্তমানে ভারতের উৎপাদিত করোনার প্রতিষেধক কোভিশিল্ড টিকার ৭০ লাখ ডোজ মজুদ আছে। এর মধ্যে ভারত সরকারের উপহারের ২০ লাখ ডোজ এবং সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা ৫০ লাখ ডোজ রয়েছে। অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকা উৎপাদন করছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট।  

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এসপি