নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের কোনাপাড়া-কাউরাট গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে স্রোতস্বিনী সাইডুলি নদী। এই নদীকে কেন্দ্র করে এখানকার কৃষি উৎপাদন স্থানীয় ও দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখে। উৎপাদিত কৃষিপণ্য স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যায় দেশের নানা প্রান্তে। পাশাপাশি এ এলাকায় রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা।

কিন্তু এত সব নাগরিক সুবিধা থাকা সত্ত্বেও সাইডুলি নদীর ওপর ৫০ বছরেও স্থাপিত হয়নি একটি সেতু। ফলে সেতু না থাকায় স্থানীয় অন্তত ১২টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

বিশেষ করে গ্রামগুলোর স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে সারা বছর নদী পারাপার করতে হয় খেয়ানৌকার মাধ্যমে। এতে প্রায়ই ঘটে নৌকাডুবির ঘটনা। শিক্ষার্থীদের বই-জামাকাপড় ভিজে যেতে হয় বিদ্যালয়ে।

এ ছাড়া সেতু না থাকায় নদীতীরবর্তী গ্রামগুলোর কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য স্থানীয় হাটবাজারে পরিবহনের মাধ্যমে দ্রুত আনা-নেওয়া করতে না পারায় কৃষকরা বঞ্চিত হন ন্যায্যমূল্য থেকে।

জানা যায়, হাওর-বেষ্টিত নওপাড়া ইউনিয়নের বহুলী গ্রাম দিয়ে সাইডুলি নদী প্রবেশ করে একই ইউনিয়নের ইটাচকি, শিমুলাটি, গনিতাশ্রম, কাউরাট কোনাপাড়া, পাঁচহার হয়ে পার্শ্ববর্তী কান্দিউড়া ইউনিয়নের গোগবাজার ত্রিবেনী ঘাটে গিয়ে মিলিত হয়েছে। যে কারণে নওপাড়া ইউনিয়নের কোনাপাড়া ও পাঁচহার গ্রাম দুটি ভৌগোলিক অবস্থান নদীর পূর্ব পাশে।

এ ছাড়া আশপাশে সড়ক যোগাযোগ না থাকায় কোনাপাড়া খেয়াঘাট পার হয়ে ইউনিয়নটির ইটাচকি, শিমুলাটি, গনিতাশ্রম, কাউরাট, কোনাপাড়া, পাঁচহার, কুতুবপুর এবং পার্শ্ববর্তী মদন উপজেলার কয়েকটি গ্রামসহ অন্তত ১২টি গ্রামের মানুষ দৈনন্দিন কাজে সাইডুলি নদী পারাপার করতে হয়।

সম্প্রতি সরজমিনে গেলে সাইডুলি নদীতে এলাকাবাসীর দুর্ভোগের চিত্র চোখে পড়ে। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, নদীতে সেতু না থাকায় এসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষকে প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। তাদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে যোগাযোগে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে, কৃষিকাজে আধুনিক যন্ত্রপাতি, সার-ওষুধ পরিবহন, জমির ফসল কেনাবেচা ও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া কেউ অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসাসেবা থেকেও বঞ্চিত হতে হচ্ছে।

তারা জানান, এলাকাবাসীকে যেকোনো প্রয়োজনে নদীর পশ্চিম পাশে যেতে হলে বর্ষায় নদী সাঁতরে বা খেয়ানৌকা দিয়ে পারাপার করতে হচ্ছে। আর শুকনা মৌসুমে নদীর পানি কিছুটা কমে গেলে নদীতে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে পারাপার হতে হয় তাদের। এতে তারা পিছিয়ে পড়ছেন নাগরিক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে।

স্থানীয় কোনাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম জানান, শুকনা মৌসুমে নদীতে পানি কম থাকে। তাই আমরা বাঁশের একটি সাঁকো তৈরি করে কোনোমতে নদী পারাপার হই। আমাদের দুঃখ-কষ্ট দেখার তো কেউ নেই। নির্বাচনের সময় নদীতে সেতু করে দেবেন বলে সবাই ভোট খুঁজতে আসে। এভাবেই চলে গেল ৫০ বছর। সেতু আর হয় না।

তিনি বলেন, নদী পার হতে গিয়া কত মানুষ যে কত কিছু হারাইছে, তার হিসাব নাই। বর্ষাকালে নদীতে কমপক্ষে ৩০ ফুটের মতো গভীর পানি থাকে। স্রোত থাকে প্রচুর। তখন ঝুঁকি নিয়ে খেয়া দিয়ে আমরা নদী পার হই। এ সময় আমাদের ছেলে-মেয়েরা সময়মতো স্কুল-কলেজে যেতে পারে না। এ কারণে আমাদের ফসল ন্যায্যমূল্যে বেচতে পারি না। তাই দ্রুত নদীতে একটি সেতু নির্মাণের জন্য এমপিসহ সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

স্থানীয় কাউরাট গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আউয়াল বলেন, নদীটি আমাদের নওপাড়া ইউনিয়নটিকে দুই ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে। নদীতে একটি সেতু নির্মাণ হলে নদীর পূর্বপাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকার ধরনই পাল্টে যাবে।

একই এলাকার কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী রহমত মিয়া বলে, পড়াশোনার তাগিদে প্রতিদিনই আমার মতো শত শত ছাত্রছাত্রীকে এই নদী পার হতে হয়। নদীতে সেতু না থাকায় আমরা সব সময় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছি। অন্তত আমাদের কষ্টের কথা ভেবে হলেও অচিরেই যেন সরকার এখানে একটা সেতু নির্মাণ করে দেয়।

কেন্দুয়া উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, সাইডুলি নদীর কাউরাট-কোনাপাড়া এলাকায় একটি সেতু নির্মাণের জন্য সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল মহোদয়ের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটি নির্মাণের অনুমোদন পাওয়া যাবে।

মো. জিয়াউর রহমান/এনএ