রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অন্তত এক বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। রাশিয়া ছাড়াও ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে পোশাক রপ্তানির গতি কমেছে। এ পরিস্থিতিতে নতুন করে অর্ডার খুব বেশি নেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মালিকরা।

এ যুদ্ধ যত বেশি সময় ধরে চলবে, ততই পোশাক রপ্তানি নিয়ে শঙ্কা দেখা দেবে। পাশাপাশি সুতাসহ কাঁচামাল এবং জাহাজসহ পণ্য পরিবহন ব্যয় বাড়বে, তাতে পোশাক খাতই বেশি শঙ্কায় পড়বে বলে মনে করছে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।

চলমান যুদ্ধের কারণে এরই মধ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্ববাজারে তেল-গ্যাস, গম, ভুট্টা, সরিষা, মসুর ডালের দাম বেড়েছে। কারণ এসব পণ্য ইউক্রেন-রাশিয়া থেকে আমদানি করা হয়। যুদ্ধের অজুহাতে দেশীয় ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়িয়েছে। ভোগ্যপণ্যের পাশাপাশি পোশাক ও বস্ত্র খাতের জন্য তুলাসহ বেশ কিছু কাঁচামাল আমদানি করা হয় দেশ দুটি থেকে। ফলে যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতির শঙ্কায় রয়েছেন।

জানতে চাইলে তরুণ উদ্যোক্তা ও বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিশ্বের যখনই এ ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করে, তার প্রভাব এমনিতেই পড়ে। তার ওপর একটি দেশ হলো রাশিয়া, আরেকটি হলো ইউরোপের পাশের দেশ ইউক্রেন। পাওয়ার ফুল দুটি দেশ তাতে আশপাশে তো প্রভাব পড়বে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সময় যতই যাবে প্রভাবের গভীরতা ততই বাড়বে।

তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে এরই মধ্যে লোকাল মার্কেটে জিনিসের দাম বাড়া শুরু হয়েছে। পোশাক খাতে তার প্রভাব পড়বে। রাশিয়াতে বর্তমানে আমাদের সরাসরি সাড়ে ৬শ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। এখানে বাজার বাড়ানোর বড় সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের এখন উত্তম সময় বিশ্বের অন্যান্য দেশে রপ্তানি বাড়ানোর।

তার কথার সঙ্গে একমত পোষণ করেন সিনিয়র উদ্যোক্তা ও বিজিএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট শহিদুলাহ আজিম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অন্তত এক বিলিয়ন ডলারের পোশাক নিয়ে শঙ্কায় আছি আমরা। যুদ্ধ যেভাবে শুরু হয়েছে। এটা প্রলম্বিত হবে মনে হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য ভালো লক্ষণ না, কারণ যুদ্ধ যত দিন ধরে চলবে রাশিয়ার পাশাপাশি ইউরোপ-আমেরিকার বাজারেও প্রভাব পড়বে। কারণ পোশাকসহ সব ধরনের পণ্যের কাঁচামালের দাম বাড়বে। জাহাজের ভাড়া বাড়বে। জাহাজ আসা-যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। অর্ডার বাতিল হবে। ফলে সবকিছু মিলে বড় ধরনের শঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, রাশিয়াতে আমরা সরাসরি সাড়ে ৬শ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি করি। আর ৩ থেকে সাড়ে ৩শ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি করি ইউরোপের মাধ্যমে। এছাড়া নতুন করে ৪০ বিলিয়ন ডলারের বাজার সৃষ্টির হওয়ার কথা ছিল। সেই সুযোগও হারাচ্ছি আমরা।

এই মুহূর্তে কোনো পোশাক রপ্তানির অর্ডার বাতিল হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশের একটি জাহাজে হামলার পর থেকে আমরা সবচেয়ে বেশি শঙ্কায় পড়েছি। এজন্য এখন আমরা নতুন করে জাহাজ পাঠাচ্ছি না। বলছি, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে। যে অর্ডারগুলো রয়েছে এগুলো স্লো করা হচ্ছে। নতুন করে অর্ডার নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। কারণ এখন প্রচুর অর্ডার রয়েছে, এগুলোর পেমেন্ট পাওয়া যাচ্ছে না।

শহিদুলাহ আজিম বলেন, করোনার থাবা থেকে বের হতে না হতেই নতুন করে যুদ্ধের কারণে আমাদের ভয় ও শঙ্কা দুটিই সৃষ্টি হয়েছে।

নিটওয়ার কারখানা মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখনও যুদ্ধের প্রভাব পোশাক খাতে পড়েনি। তবে পড়বে না যে তা না। যুদ্ধের সময় লম্বা হলে ইউরোপ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারপর বাংলাদেশের পোশাক খাতে পড়বেই।

বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিবিএ) সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসেন বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ দ্রুত বন্ধ হওয়া উচিত। কারণ ইউরোপের বাণিজ্যের অনেক কিছু নির্ভর করে রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত রাশিয়ায় রপ্তানি হয়েছে ৪১৫ দশমিক ৪৭ মিলিয়ন ডলারের পোশাক। যা আগের বছরের তুলনায় ৩৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি।

আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে প্রতিবছর প্রায় ১১০ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়ে থাকে। বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় তৈরি পোশাকসহ কিছু পণ্য রপ্তানি হয়। দেশটি থেকে গম, প্রতিরক্ষা সরঞ্জামসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ।

২০২১-২২ অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে রাশিয়ায়। চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রথম তিন মাসে আমদানি হয়েছে ৭ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের পণ্য। আগের বছর বা ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় ৬৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার মূল্যের বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয়।

এমআই/এসএসএইচ