ইফতারে শরবত, খেজুর আর ছোলা-মুড়ির পর সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হালিম। সারা বছর পাওয়া গেলেও রমজানের শুরু থেকে হালিমের কদর বেড়েছে। রাজধানীর অলিগলি থেকে অভিজাত হোটেল-রেস্টুরেন্ট- সর্বত্র পাওয়া যাচ্ছে গরু, খাসি ও মুরগির হালিম। 

কদর বাড়ার সুযোগে ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দিয়েছেন হালিমের দাম। অলিগলির দোকানগুলোতে হালিমের দাম বেড়েছে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৩০-৫০ টাকা। আর বড় দোকান ও অভিজাত হোটেলগুলোত ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে হালিমের দাম। কিছু কিছু জায়গায় অবশ্য দামের পাশাপাশি পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।

দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাংস ও অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়েছে, তাই হালিমের দামও বাড়াতে হয়েছে। তবে দ্রব্যমূল্যের দামের পাশাপাশি হালিমের দাম বৃদ্ধিতে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। কেউ কেউ ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন।

রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় ভ্যানে করে ৫ বছর ধরে হালিম বিক্রি করেন নূরু-ই-আলম। তিনি রোজার আগে বাটিতে ২০০-৩০০ গ্রাম হালিম বিক্রি করতেন ৫০ টাকায়। রোজার শুরু থেকে বিক্রি করছেন ৯০-১০০ টাকায়। দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে তিনি জানান, মাংস ও মসলাসহ প্রায় সব উপাদানের দাম বেড়েছে। তাই হালিমের দাও বাড়াতে হচ্ছে।

বাড্ডা, রামপুরা, শাহজাদপুর এলাকায় রমজান উপলক্ষে গড়ে ওঠা ছোট ছোট ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে আধা কেজি ওজনের গরুর মাংসের হালিম বিক্রি হচ্ছে ২০০-৩০০ টাকা। আর এক কেজি ওজনের বাটিতে হালিম বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৬০০ টাকায়।

বাড্ডা লিংক রোডের বনফুল অ্যান্ড কোম্পানির দোকানটিতে ছোট আকারের বাটিতে গরুর মাংসের হালিম বিক্রি করা হচ্ছে ৩০০ টাকা। আর বড় বাটির হালিম বিক্রি করা হচ্ছে ৬০০ টাকায়। দোকানটিতে দুই দফা দর কষাকষি করে ছোট এক বাটি হালিম ৩০০ টাকায় নেন আমজাদুর রহমান নামে এক ব্যক্তি।তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৫-২০ দিন আগেও ২০০ টাকায় হালিম কিনেছি। আজকে বলছে ৩০০ টাকা। ছোট মেয়ের আবদার, তাই কিনলাম। দাম বাড়লে কী আর করব।

রাজধানীর অভিজাত এলাকায় হালিমের দাম আরও বেশি। গুলশানের শুটিং ক্লাবের ইফতার বাজারে গরুর মাংসের হালিম বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা করে। খাসির মাংসের হালিমের বাটি ১৬শ টাকা। অবশ্য ইফতার বাজারটিতে বিশেষ অফার রয়েছে।

গুলশানের অ্যারাবিয়ান হোটেলে দুই ধরনের হালিম বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে এক কেজি খাসির মাংসের হালিম বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার টাকা। আর গরুর মাংসের হালিম বিক্রি হচ্ছে ১৬শ টাকা। দুটি হোটেলেই গত বছরের তুলনায় বাটিপ্রতি হালিমের দাম ৩০০ টাকা করে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

শাহজাদপুরের পূর্ণিমা রেস্টুরেন্টে এক কেজি হালিম বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকায়। বিক্রয় কর্মী সাজ্জাদ খান বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার হালিমের দাম প্রায় দ্বিগুণ। গত বছর ২৩০-২৫০ টাকা কেজি দরে হালিম বিক্রি করেছি। এবার ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি।

দাম বাড়ালেন কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তো আর লোকসানে বিক্রি করব না। গতবারের চেয়ে এখন গরুর মাংসের দাম বেশি। তাই হালিমের দামও বেশি।

দোকানটিতে আধা কেজি ওজনের হালিম কিনেছেন আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, এক কেজি ওজনের হালিমের দাম ৫০০ টাকা। কিন্তু আধা কেজি কিনতে হয়েছে ২৮০ টাকায়। অনেক দর-দাম করেও দাম কমাতে পারিনি।

রাজধানীর কলাবাগানের বিখ্যাত মামা হালিম তৈরি হয় প্রায় একশ উপকরণ দিয়ে। গরু ও খাসির পাশাপাশি মুরগির মাংসের হালিমও এখানে বিক্রি করা হয়। এখানে ২৫০ গ্রাম ওজনের গরু মাংসের হালিমের বাটি ২৫০ টাকা, খাসির হালিমের বাটি ৩০০ টাকা এবং মুরগির হালিম বিক্রি করা হচ্ছে ৩৫০ টাকা করে।

আর গরুর মাংসের মাঝারি বাটির হালিম ৮০০ টাকা আর বড় বাটির হালিমের দাম দুই হাজার টাকা রাখা হচ্ছে। খাসির মাংসের মাঝারি বাটির হালিম বিক্রি হচ্ছে ১৩শ টাকা।

মামা হালিমের বিক্রয়কর্মী আজিজুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, গরু ও খাসির মাংসের দাম কেজিতে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা বেড়েছে। অন্যান্য পণ্যের দামও বেড়েছে। তাই হালিমের দাম একটু বাড়াতে হয়েছে। তবে আমাদের এখানে বেশি বাড়েনি।

দোকানটিতে হালিম কিনতে আসা রোকেয়া আক্তার নামে এক নারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সারাদিন রোজার রাখার পর হালিম খেলে ভালো লাগে। তাই হালিম কিনতে এসেছি। কিন্তু দাম অনেক বেশি।

এমআই/ওএফ/জেএস