নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ‘এননটেক্স’ গ্রুপকে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জনতা ব্যাংক। ঋণের অর্থ আদায় করতে না পেরে এখন বিপদে আছে ব্যাংকটি। এত কিছুর পর আবারও বিশেষ সুবিধা চায় এননটেক্স। তাতে সায় রয়েছে জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষেরও।

এননটেক্সের ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠিয়েছে জনতা ব্যাংক। পাশাপাশি তাদের খেলাপি ঋণের সুদ মওকুফেরও আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু নীতিবহির্ভূত হওয়ায় দুটি আবেদনই বাতিল করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জানা গেছে, ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে এননটেক্স গ্রুপের ২২টি প্রতিষ্ঠান জনতা ব্যাংক থেকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। যা সুদসহ বেড়ে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। এই টাকার পুরোটাই এখন খেলাপি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে এননটেক্স গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ জালিয়াতি ও মানি লন্ডারিংয়ের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এজন্য গ্রুপটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদনে এর আগেও সায় দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। এবারও তা বাতিল করে দিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি।

সম্প্রতি গ্রুপটির ২২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭টি প্রতিষ্ঠানের ঋণ পুনঃতফসিল করার উদ্যোগ নেয় জনতা ব্যাংক। যার পরিমাণ ১ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। এর সঙ্গে তাদের ২১৮ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করে দেওয়ার অনুমোদন চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আবেদন করা হয়েছে।

কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে এননটেক্স গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ জালিয়াতি ও মানি লন্ডারিংয়ের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এজন্য গ্রুপটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদনে এর আগেও সায় দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। এবারও তা বাতিল করে দিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, এননটেক্সের ৭ প্রতিষ্ঠানের ঋণ পুনঃতফসিল ও সুদ মওকুফের বিষয়টি চিঠি দিয়ে বাতিল করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এসব আবেদন করার ক্ষেত্রে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পরবর্তীতে এসব আবেদন করতে হলে পর্ষদের অনুমোদন নিতে হবে। কিন্তু তারপরও অনুমোদন ছাড়াই আবেদন করেছে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। যা ব্যাংক কোম্পানি আইনের লঙ্ঘন। যারা পর্ষদের অনুমতি ছাড়া এননটেক্সেকে সুবিধা দেওয়ার জন্য আবেদন করেছে তাদের (ব্যাংকের কর্মকর্তা) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।      

এননটেক্সকে কেন ছাড় দিতে চায় ব্যাংক?

কেন বারবার এননটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠানকে ছাড় দিতে চায় জনতা ব্যাংক? বিষয়টি জানতে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুছ ছালাম আজাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়, কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শন রিপোর্টে উঠে এসেছে জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া কোম্পানি খুলে জনতা ব্যাংক থেকে এলসির (ঋণপত্র) টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এননটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনুস বাদল। তিনি ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ৫৭৬৮ কোটি টাকা বের করে নেন।

পরে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এননটেক্সের কিছু ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদন করা হয়েছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’

‘আমার মিটিং আছে’ বলে ফোন কেটে দেন তিনি। পরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এননটেক্স গ্রুপের ঋণ জালিয়াতি

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শন রিপোর্টে উঠে এসেছে জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া কোম্পানি খুলে জনতা ব্যাংক থেকে এলসির (ঋণপত্র) টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এননটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনুস বাদল। তিনি ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ৫৭৬৮ কোটি টাকা বের করে নেন। ওই টাকার মধ্যে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে তিনি একটি ‘ডামি ফ্যাক্টরি’ করেন। বাকি টাকা দেশের বাইরে পাচার করে দেন। একটি দেশে তিনি ‘সিসার’ বারও দেন। ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগে তার বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি প্রচার করেন। আসলে তিনি বেশিরভাগ অর্থ পাচার করে দিয়েছেন। 

এননটেক্সের ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠিয়েছে জনতা ব্যাংক। পাশাপাশি তাদের খেলাপি ঋণের সুদ মওকুফেরও আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু নীতিবহির্ভূত হওয়ায় দুটি আবেদনই বাতিল করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে আসে, এ জালিয়াতিতে সরাসরি সহায়তা করেন জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবদুছ ছালাম আজাদ। জনতা ব্যাংকের কর্পোরেট শাখার ব্যবস্থাপক পদে থাকার সময় আবদুছ ছালাম আজাদ আইন-কানুন ও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে গ্রুপটির ঋণের অনুমোদন, বিতরণ ও পরিবীক্ষণে সহায়তা করেছেন।

সম্প্রতি ওই রিপোর্ট দুদকে পাঠানো হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

এননটেক্স গ্রুপের মালিক ইউনুস বাদলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করে সেটি ‘এনগেজড’ পাওয়া যায়। তাই এ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এসআই/এসকেডি/জেএস