আমদানি হলেও বাজারে নেই, সয়াবিন তেলের জন্য দোকানে দোকানে ঘুরছেন ক্রেতা। তবুও মিলছে না তেল। যাও পাওয়া যাচ্ছে দাম বেশি, ১ লিটার ২০০ টাকা। ঈদের আগে থেকে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে দেশে। এই সংকটের মধ্যেই সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৩৮ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে মিল মালিকরা। সাধারণ নাগরিকরা বলছেন, এর মাধ্যমে সিন্ডিকেটকারীদেরই পুরস্কৃত করা হলো।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স ও বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকা, যা এতদিন ১৪০ টাকা ছিল। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা করা হয়েছে। ৫ লিটারের বোতলের দাম ৭৬০ টাকা থেকে নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৮৫ টাকায়। নতুন এ দাম শনিবার থেকে কার্যকর হবে। 

এ নিয়ে গত ৪ মাসে তৃতীয়বারের মতো ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হলো।

হঠাৎ করে প্রতি লিটারে ৩৮ টাকা কেন দাম বাড়ানো হলো জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম অনেক বেশি। প্রতি টন প্রায় ১৯শ ডলার। তাই দেশে তেলের দাম সমন্বয় করেছে আমদানিকারক ও মিল মালিকরা।’

২০১৯ সালে দেশের বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম ছিল ১০৪ টাকা। ২০২০ সালে সেটি বেড়ে হয় ১১৩ টাকা, ২০২১ সালে ১৩০ টাকা এবং ২০২২ সালের শুরুতে এসে হয় ১৬৮ থেকে ১৭০ টাকা। এখন ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা। পামওয়েলের লিটার (খোলা) ২০১৯ সালে ছিল ৫৮ টাকা, ২০২০ সালে ৭৮ টাকা, ২০২১ সালে ১০৭ টাকা এবং ২০২২ সালের শুরুতে হয় ১৫০ টাকা। এখন ১৬৫ টাকা।

তিনি বলেন, ‘প্রতি মাসেই তেলের দাম সমন্বয় করা হয়। আমদানিকারক ও মিল মালিকরা একটা রেট দেয়, আমাদের ট্যারিফ কমিশন বিষয়টা দেখে তাদের সমন্বয় করার ক্যালকুলেশন ঠিক আছে কি না। আজ মিল মালিকরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বসেছিল। বৈঠকের পর তারা একটা মূল্য নির্ধারণ করেছে।’

লিটারে এক লাফে ৩৮ টাকা বাড়ানোর বিষয়টি কীভাবে দেখছেন? জানতে চাইল বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘অনেকদিন যাবৎ মিল মালিকরা তেলের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু আমরা রমজানে তেলের দাম বাড়াতে দিইনি। প্রতি মাসে সমন্বয় করার কথা থাকলেও ২০ মার্চের পরে করা হয়নি। তাই বেশি বেড়েছে। তবে তারপরও আগামী এক সপ্তাহ আমাদের ট্যারিফ কমিশন বাজার দেখবে। এরপর প্রয়োজনে আবার সমন্বয় করে দেবে।’

মিল মালিকদের ভাষ্য, বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের নিয়মিত মূল্য প্রতি টন ১২০০ ডলার থেকে বেড়ে ১৮০০ ডলারে উঠেছে। এজন্যই দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়াতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে দেশের অন্যতম আমদানি কারক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক (কর্পোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেশি। বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আজকে বৈঠক ছিল। ওখানে তেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। এখন দাম কেন এত বাড়ল তা বাণিজ্য সচিব ভালো বলতে পারবেন।’

বেসরকারি সংস্থা কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এতদিন তো তেল পাওয়াই যায়নি। এখন দাম বেড়ে যাওয়ায় যেসব ব্যবসায়ী তেল মজুদ করেছে তারা ভোক্তার পকেট থেকে আরও কিছু টাকা হাতিয়ে নিবে। এতে করে ভোক্তার কষ্ট আরও বাড়বে।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারের দাম বেশির কথা বলে দাম সমন্বয় করেছে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে যখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যাবে তখন আমাদের দেশেও যেন দাম কমিয়ে সমন্বয় করা হয়। কারণ দেশের একটা রীতি চালু হয়ে গেছে একবার দাম বাড়লে এটা আর কমে না। এ বিষয়ে সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে যেন ভোক্তার স্বার্থ ক্ষুন্ন না হয়। 

পাশাপাশি আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশে বিকল্প ব্যবস্থায় তেল উৎপাদনের দিকে আমাদের নজর দিতে হবে বলে তিনি জানান।

খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা এতদিন ১৪০ টাকা ছিল। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা করা হয়েছে। ৫ লিটার বোতলের দাম ৭৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৮৫ টাকা করা হয়েছে। নতুন এ দাম শনিবার থেকে কার্যকর হবে। 

সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৮০ টাকা। এক বছর আগে ২০২১ সালের ৫ মে বোতলজাত সয়াবিনের দাম ছিল ১১৮ টাকা।  

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত চার বছরে যেসব ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে তার মধ্যে অন্যতম সয়াবিন ও পাম অয়েল। ২০১৯ সালে দেশের বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম ছিল ১০৪ টাকা। ২০২০ সালে সেটি বেড়ে হয় ১১৩ টাকা, ২০২১ সালে ১৩০ টকা এবং ২০২২ সালের শুরুতে এসে হয় ১৬৮ থেকে ১৭০ টাকা। এখন ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা। পামওয়েলের লিটার (খোলা) ২০১৯ সালে ছিল ৫৮ টাকা, ২০২০ সালে লিটারে ৭৮ টাকা, ২০২১ সালে ১০৭ টাকা এবং ২০২২ সালের শুরুতে হয় ১৫০ টাকা। এখন ১৬৫ টাকা।

এদিকে সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে সিন্ডিকেটকারীদের শাস্তির বদলে পুরস্কৃত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ঈদের আগে সয়াবিন তেল সরবরাহ না করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করল আমদানি ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নতুন করে মূল্যনির্ধারণ অর্থাৎ বাড়িয়ে দিয়ে তাদের পুরস্কৃত করল। সরকার জনগণকে স্বস্তি দিতে আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে শুল্ক প্রত্যাহার করল, সেই সুবিধা তো জনগণ পেল না।
 
এসআই/আইএসএইচ/জেএস