প্রস্তাবিত ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা আগের বছরের মতো ৩ লাখ টাকাই রাখা হয়েছে। অর্থ্যাৎ কোনো ব্যক্তির বার্ষিক আয় ৩ লাখ টাকার বেশি হলে তাকে আয়কর দিতে হবে। ৩ লাখ বা এর নিচে আয় হলে কর দিতে হবে না।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার চলতি ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি।

দুপুর ১২টার পর জাতীয় সংসদ ভবনে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। এতে অর্থমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা অংশ নিয়েছেন।

করমুক্ত আয়সীমার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ছিল মাত্র ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, যা ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৩ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়। পরবর্তী অর্থবছরেও উক্ত সীমা বহাল রাখা হয়েছে। নারী করদাতা, সিনিয়র করদাতা, প্রতিবন্ধী করদাতা, তৃতীয় লিঙ্গ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য করমুক্ত আয়ের এই সীমা আরও বেশি।

যদিও দেশের ব্যবসায়ী ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ করদাতাদের একটু স্বস্তি দিতে করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধির সুপারিশ করেছিল।

বর্তমানে ব্যক্তির আয়ের প্রথম ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয় করমুক্ত। পরবর্তী ১ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ৫ শতাংশ, পরবর্তী ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর ২০ শতাংশ এবং এর চেয়ে বেশি আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হচ্ছে।

নারী ও ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতাদের জন্য ৩ লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৩ লাখ ৫০ হাজার এবং গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা রাখা হয়েছে।

‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ স্লোগান নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করা হয়েছে। নতুন এ বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এতে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার কথা বলা হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। আর সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮৪ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা বেশি। নতুন বাজেটে সরকারের আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা হতে যাচ্ছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আর অনুদানসহ ঘাটতি ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। 

আয়ের লক্ষ্যমাত্রা চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তুলনায় ৪৪ হাজার ৭৯ কোটি টাকা বেশি। কর বাবদ ৩ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা আয় করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে এনবিআরকে আগের বছরের তুলনায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দিচ্ছে সরকার। এনবিআর বহির্ভূত কর থেকে আয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। আর কর ছাড়া আয় ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান থেকে আয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।

আরএম/আইএসএইচ