বাংলাদেশ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জেনেরিক মেডিসিনের পেটেন্ট অধিকারের ক্ষেত্রে ট্রেড রিলেটেড অ্যাসপেক্টস অব ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস (ট্রিপস) ছাড় পাওয়ার সুবিধা ভোগ করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের ঘোষণায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

যোগ্য সদস্য দেশ এ সিদ্ধান্তের তারিখ থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তের বিধানগুলো প্রয়োগ করতে পারে। সাধারণ পরিষদ কোভিড-১৯ মহামারির ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এই সুবিধা দেওয়ার সময়সীমা বাড়াতে পারে। ডব্লিউটিও’র ১২তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে (এমসি১২) এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

এতে বলা হয়, সাধারণ পরিষদ এই সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা প্রতি বছর পর্যালোচনা করবে।

ডব্লিউটিও সম্মেলন ১২ থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত হয়। প্রাথমিকভাবে ১৫ জুন সম্মেলন শেষ হওয়ার কথা ছিল, আলোচনা এবং চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য আরও সময় দিতে মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের মেয়াদ দুই দিন বাড়ানো হয়।

বাংলাদেশসহ অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) উত্তরণ লাভের প্রেক্ষিতে বাণিজ্য সুবিধা ছয় বা নয় বছরের জন্য বাড়াতে গত দুই বছর ধরে ডব্লিউটিও উদ্যোগের অধীনে লবিং করছিল।

এই ধারাটি গৃহীত হওয়ার কারণে ২০২৬ সালে একটি উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পরও বাংলাদেশের এলডিসি বাণিজ্য সুবিধা উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে। যদিও আরও আলোচনার প্রয়োজন, কারণ ঘোষণাটিতে এখনও বিষয়টি নির্দিষ্ট করা হয়নি, তবে সুবিধা লাভের অনুচ্ছেদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। 

ডব্লিউটিও তার ঘোষণাপত্রে বলেছে ‘বিদ্যমান কঠিন প্রেক্ষাপটে, আমরা সন্তুষ্টির সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে এলডিসি সদস্যরা অগ্রগতি লাভের শর্ত পূরণ করেছে বা ইউনাইটেড নেশনস কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) দ্বারা নির্ধারিত উত্তরণের মানদণ্ড পূরণ করতে চলেছে এবং উত্তরণের বিশেষ চ্যালেঞ্জগুলো স্বীকার করেছে, যার মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য-সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সহায়তা ব্যবস্থার ক্ষতি।

ঘোষণায় আরও বলা হয়েছে, এলডিসি পর্যায় থেকে উত্তরণের পর এসব দেশের জন্য সুষ্ঠু ও টেকসই পরিবর্তনের সুবিধার্থে ডব্লিউটিওতে কিছু পদক্ষেপ যে ভূমিকা পালন করতে পারে আমরা তা স্বীকার করি।

এটি ধারণা করা যায় যে বাংলাদেশসহ যোগ্য দেশগুলো আরও পাঁচ বছরের জন্য টিআরআইপি ছাড় সুবিধা উপভোগ করতে পারে। বাংলাদেশের টিআরআইপি সুবিধা ২০২৬ সালে এলডিসি উত্তরণের সঙ্গে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এবারের ঘোষণা থেকে সুবিধা লাভের সুযোগ আরও বেড়েছে।

বাংলাদেশও ই-কমার্স ব্যবসা থেকে লাভবান হতে পারে। কারণ ঘোষণায় এই বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ১৯৯৮ সালের চুক্তিতে ই-কমার্স পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

এদিকে ই-কমার্সের ওপর শুল্ক মওকুফের কারণে বাংলাদেশ বছরে ৬.০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ ব্যবসা হারায়। ই-কমার্স ইস্যু গ্রহণ করায় বাংলাদেশ লাভবান হবে।

ডব্লিউটিও ক্ষতিকর মাছ ধরার ওপর ভর্তুকি বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে। তবে উত্তরণ লাভকারী স্বল্পোন্নত দেশগুলো সাত বছর ভর্তুকি দিতে পারবে।
তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি খুব বেশি সম্পর্কিত নয়, কারণ বেশিরভাগ মাছ ধরা হয় অভ্যন্তরীণভাবে, সামুদ্রিক মাছ ধরার ক্ষেত্রে নয়। মৎস্য ভর্তুকি হ্রাস মূলত সামুদ্রিক ভর্তুকি সম্পর্কিত।

ডব্লিউটিওর ঘোষণায় বলা হয়েছে, প্রায় ছয় দিন ও রাত ধরে আলোচনার পর বাণিজ্য বৃদ্ধির সুবিধার্থে ডব্লিউটিওর ১৬৪টি সদস্য দেশ বড় বৈশ্বিক ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে।

সম্মেলনটি কোভিড-১৯ মহামারিতে ডব্লিউটিওর প্রতিক্রিয়া এবং ভবিষ্যতের মহামারির প্রস্তুতির মতো বিষয়গুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে। ডব্লিউটিওর মন্ত্রী পর্যায়ের ঘোষণায় আরও বলা হয়, তারা খাদ্য নিরাপত্তা, জরুরি সময়ে খাদ্য ক্রয় থেকে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির অব্যাহতি, ই-কমার্স, টিআরআইপি মওকুফ এবং মৎস্য ভর্তুকি ইত্যাদি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে।

ঘোষণায় ডব্লিউটিও সদস্যরাও স্বল্পোন্নত দেশ এবং এলডিসিতে উত্তরণে বাণিজ্য সুবিধা প্রসারিত করতে সম্মত হয়েছে। তবে সুবিধা লাভকারী দেশগুলো কতদিন ও কীভাবে সুবিধাটি পাবে তা এখনও নির্দিষ্ট করা হয়নি।

ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক এনগোজি ওকোনজো-আইওয়ালা এক বিবৃতিতে বলেছেন, প্রতিনিধিদলের মধ্যে ২৪ ঘণ্টা আলোচনার মাধ্যমে ‘জেনেভা প্যাকেজ’ তৈরি করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে— মৎস্য ভর্তুকি, জরুরি পরিস্থিতিতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রতিক্রিয়া, কোভিড-১৯ টিকার পেটেন্ট মওকুফ, খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি এবং ডব্লিউটিও সংস্কার।

তিনি বলেন, আপনারা যে চুক্তিতে পৌঁছেছেন তা সারা বিশ্বের মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনবে। ফলাফলগুলো প্রমাণ করে যে ডব্লিউটিও প্রকৃতপক্ষে আমাদের সময়ের জরুরি পরিস্থিতিতে সাড়া দিতে সক্ষম।

ডব্লিউটিও আরও বলেছে যে তারা বিশ্বকে দেখাতে চায় ভূ-রাজনৈতিক পর্যায়ে বৈশ্বিক সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে এবং এই প্রতিষ্ঠানটিকে শক্তিশালী ও পুনরুজ্জীবিত করতে ডব্লিউটিও সদস্যরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারে।

জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর দেবব্রত চক্রবর্তী বলেন, এবারের সম্মেলনে প্রায় ৮০ শতাংশ প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। এই সম্মেলনের ফলাফল সন্তোষজনক। ২০১৫ সালের সম্মেলনের পর এই সম্মেলনে কিছু ভালো ফলাফল এসেছে।

তিনি উল্লেখ করেন, মৎস্য চুক্তি অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশের জন্য সহায়ক হবে।

তিনি আরও বলেন, দেশগুলো বিরোধ নিষ্পত্তি থেকে পরিত্রাণ পেতে কিছুটা শিথিল সুবিধা ভোগ করবে। টিআরআইপি মওকুফের সিদ্ধান্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যও সহায়ক, কারণ পেটেন্ট শিথিল করার মাধ্যমে টিকা উৎপাদন সহজতর হবে।

এসএসএইচ