অর্থপাচার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধে চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) প্রথম ১০ মাসে তদন্তাধীন নয়টি মামলার বিপরীতে ৮৬৬ কোটি টাকা জব্দ করেছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

শনিবার (১৮ জুন) রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় বিএফআইইউ আয়োজিত ‘বাংলাদেশ মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধ কার্যক্রমের ২০ বছর’ শীর্ষক সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়।

বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের বিষয়ে সুইস অথোরিটির কাছে তথ্য চেয়ে আবেদন করা হয়েছে— জানিয়ে সেমিনারে বিএফআইইউ’র অতিরিক্ত পরিচালক কামাল হোসেন বলেন, ‘পাচার করা অর্থ উদ্ধার জটিল কাজ। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের ৬৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ সম্পর্কে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছ থেকে তথ্য পেয়েছে বিএফআইইউ।’

মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) চলতি অর্থবছরের ( ২০২১-২২) এপ্রিল পর্যন্ত তদন্তাধীন নয়টি মামলার বিপরীতে ৮৬৬ কোটি টাকা জব্দ করেছে

সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকে থাকা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অর্থের বিষয়ে ২০১৪ সাল থেকে তথ্য প্রকাশ করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। সেই তথ্য বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও তদন্তকারী সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে।’

 অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির / ছবি- সংগৃহীত

সেমিনারে জানানো হয়, এখন পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে ৮০০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আর্থিক তথ্য সংগ্রহ করেছে বিএফআইইউ।

মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) চলতি অর্থবছরের ( ২০২১-২২) এপ্রিল পর্যন্ত তদন্তাধীন নয়টি মামলার বিপরীতে ৮৬৬ কোটি টাকা জব্দ করেছে।

যদিও আগের (২০২০-২১) অর্থবছরে সাতটি মামলার বিপরীতে জব্দ করা টাকার পরিমাণ ছিল ৩৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। একইসঙ্গে গত পাঁচ বছরে ৬৩টি তদন্তাধীন মামলার বিপরীতে টাকা জব্দ করা হয়েছে এক হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা।

এছাড়া বিএফআইইউ চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে বাজেয়াপ্ত করা ২৭ কোটি টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দিয়েছে। গত পাঁচ অর্থবছরের সরকারের কোষাগারে জমা পড়েছে এক হাজার ২৭৩ কোটি টাকা।

২০২১ সা‌লে বাংলা‌দে‌শিরা সুইস ব্যাং‌কে প্রায় তিন হাজার কো‌টি টাকার সমপ‌রিমাণ অর্থ জমা ক‌রে‌ছেন / ফাইল ছবি

বাংলাদেশ থেকে মূলত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, হংকং, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও ইউরোপের দেশগুলোতে অর্থপাচার হয় বলে সেমিনারে জানানো হয়।

বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, বিশেষ অতিথি ছিলেন এবিবি চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। এছাড়া বিএফআইইউ’র একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

 সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে গত এক বছরে বাংলাদেশিদের টাকার পরিমাণ নজিরবিহীনভাবে বেড়েছে। এক বছর আগের তুলনায় ২০২১ সা‌লে বাংলা‌দে‌শিরা সুইস ব্যাং‌কে প্রায় তিন হাজার কো‌টি টাকার সমপ‌রিমাণ অর্থ জমা ক‌রে‌ছেন

সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে গত এক বছরে বাংলাদেশিদের টাকার পরিমাণ নজিরবিহীনভাবে বেড়েছে। এক বছর আগের তুলনায় ২০২১ সা‌লে বাংলা‌দে‌শিরা সুইস ব্যাং‌কে প্রায় তিন হাজার কো‌টি টাকার সমপ‌রিমাণ অর্থ জমা ক‌রে‌ছেন।

সেখানে আরও বলা হয়, ২০২১ সালে সেখানকার ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ প্রায় আট হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা; যা দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ জমা।

এসএনবির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর সুইজারল্যান্ডের শতাধিক ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত ৮৭২ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁতে পৌঁছেছে। সুইজারল্যান্ডের প্রতি ফ্রাঁ বাংলাদেশের ৯৫ টাকার সমান। সেই হিসেবে সেখানকার ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থের পরিমাণ প্রায় আট হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা।

এসআই/এমএআর/