বিশ্বব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে নতুন আঞ্চলিক ভাইস প্রেসিডেন্টের হিসেবে যোগ দিয়েছে রুথ হরোউইজ। তার লক্ষ্য এ অঞ্চলে কর্মসংস্থান তৈরি, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়ে জলবায়ু কর্মসূচি জোরদার করা।

সোমবার (৮ আগস্ট) আইএফসির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আইএফসির জানায়, কোভিড-১৯ এর প্রভাব থেকে পুনরুদ্ধারে দেশগুলোকে সহায়তা করার ওপর মূল দৃষ্টি দিয়ে কর্মসংস্থান তৈরি ও টেকসই রাখা, মানুষের জন্য উন্নত সেবা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে রক্ষা করা। এজন্য আইএফসি ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়া গত অর্থবছরে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়া এবং একই সঙ্গে এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য আইএফসির আঞ্চলিক ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে রুথ হরোউইজের যোগ দেওয়ার পর এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হলো।

রুথ হরোউইজ আলফনসো গার্সিয়া মোরার স্থলাভিষিক্ত হলেন, যিনি এখন ইউরোপ, ল্যাটিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের জন্য আইএফসির আঞ্চলিক ভাইস প্রেসিডেন্ট।

আইএফসির এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট রুথ হরোউইজ বলেন, ‘আমি এ অঞ্চলে যোগ দিতে পেরে এবং চমৎকার কর্মী, গ্রাহক ও অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ শুরু করতে পেরে ভীষণ আনন্দিত এবং আমি এ অঞ্চলে প্রভাবশালী বেসরকারি খাত সম্পৃক্ততার শক্তিশালী ইতিহাস নির্মাণের প্রত্যাশা করছি।

হরোউইজ ৩০ বছরেরও বেশি সময়ের অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ বৈশ্বিক বিনিয়োগ পেশাজীবী। অতি সম্প্রতি তিনি আইএফসি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির (এএমসি) ইক্যুয়িটি মোবিলাইজেশন ডিভিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন, যা ১৩টি তহবিলে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি উত্তোলন করেছে। এএমসির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এবং পরিচালক হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে তিনি লেহম্যান ব্রাদার্সে কর্মরত ছিলেন।

কোভিড-১৯ অতিমারির প্রভাব দীর্ঘায়িত হওয়ায় আইএফসি এই অঞ্চলের পুনর্গঠনে আবারও জরুরি আর্থিক সহায়তা বাড়িয়েছে। খাদ্য ও পণ্য বাণিজ্য বাড়াতে অবদান রাখাসহ স্থানীয় রপ্তানিকারক এবং আমদানিকারকদের সহায়তায় এর স্বল্পমেয়াদি অর্থায়নের পাশাপাশি কোভিড মোকাবিলায় আইএফসি ২০২২ অর্থবছরে ২৩৭ মিলিয়ন ডলার সরবরাহ করেছে। সামগ্রিকভাবে ২০২০ থেকে ২০২২ অর্থবছর পর্যন্ত আইএফসি এই অঞ্চলে কোভিড-১৯ প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় আইএফসির আঞ্চলিক পরিচালক হেক্টর গোমেজ আং বলেন, ‘গত বছর দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে আইএফসির কর্মকাণ্ড মানুষকে সহায়তায় বিভিন্ন সমাধান দিতে এবং ব্যবসার বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বেসরকারি খাতকে সক্ষম করেছে।’ 

তিনি বলেন, ‘বেসরকারি খাতের উদ্ভাবন এবং দক্ষতা আগের তুলনায় এখন আরও বেশি প্রয়োজন, কেননা দেশগুলো একটি সহনশীল ও টেকসই ভবিষ্যতের পথ নির্মাণ করছে।’

অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি, দ্বন্দ্ব-সংঘাত এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রভাবের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ কারণে এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হরোউইজ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে প্রধান অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে দেশগুলোকে জলবায়ু সংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির চাহিদা পূরণ এবং টেকসই অবকাঠামো বিনির্মাণে সহায়তার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

হরোউইজ বলেন, ‘‘ইউক্রেনে যুদ্ধ এবং অস্থির আবহাওয়ার কারণে ইতিমধ্যে খাদ্য, জ্বালানি এবং সারের দাম বেড়ে গেছে এবং এতদিনের উন্নয়ন অর্জনকে হুমকির মাঝে ফেলেছে , যা  সামনের কাজকে আরও জরুরি করে তুলেছে। তবে বেসরকারি খাতের উদ্ভাবন, সরকারি খাতের নীতি এবং অর্থায়নের প্রাপ্যতার সঠিক মিশ্রণ কেবলমাত্র দক্ষিণ এশিয়াকে ভবিষ্যত অভিঘাত মোকাবিলার সক্ষমতা বাড়াবে না, একই সাথে এই অঞ্চলের অধিকতর উন্নত রূপান্তরে সহায়তা করবে।’’
 
তিনি বলেন, জলবায়ু সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে এ অঞ্চল যে হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে, তা গভীর। কিন্তু এখানে প্রচুর সুযোগও রয়েছে, কেননা সবুজ বিনিয়োগের জন্য অনেক ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ অপেক্ষমান রয়েছে। আইএফসি বেসরকারি খাতের সঙ্গে বসে বিভিন্ন সমাধান বের করার জন্য অধিকতর সক্ষম অবস্থায় আছে, যা শুধু অর্থনীতিগুলোকে কার্বনমুক্ত করবে না, এ অঞ্চল যেসব উন্নয়ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, সেগুলোও মোকাবিলায় সহায়তা করছে। আমি এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে উৎসাহজনক দায়িত্ব নিয়ে নতুন অংশীদারিত্ব জোরদার এবং উন্নয়নের দিকে তাকিয়ে আছি।’

২০২২ অর্থবছরে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল জুড়ে আইএফসির কর্মকাণ্ড
>>ভারতে আইএফসির বিনিয়োগের ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন, পরিবেশবান্ধব সাশ্রয়ী আবাসন এবং স্বাস্থ্যসেবায় মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ভবিষ্যত অভিঘাতে টিকে থাকার প্রস্তুতি হিসেবে ছোট ছোট ব্যবসাকে সহায়তা করা এবং জলবায়ু ও উন্নয়নের মধ্যে সমন্বয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। জলবায়ু কেন্দ্রিক সহায়তার অংশ হিসেবে আইএফসি আবুধাবির জাতীয় কেন্দ্রীয় কুলিং কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্বে ভারতে ‘ডিস্ট্রিক্ট কুলিং’ সম্প্রসারণ করেছে, যা মহাকাশ শীতল করার জন্য জ্বালানির ভোগ উল্লেখযোগ্য কমিয়ে দেশটির জলবায়ু লক্ষ্যগুলো অর্জনে সহায়তা করবে। এছাড়া ভারতে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমাতে এবং জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করতে আইএফসি রাজস্থানে ২০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ৩০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। প্রকল্পটির উন্নয়ন করছে এনেল পাওয়ার এসপিএর একটি সহযোগী কোম্পানি, যেটি বিশ্বের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের অন্যতম ডেভেলপার।

>>বাংলাদেশে লজিস্টিকস এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তি উন্নয়নে আইএফসি তৈরি পোশাক খাত ও অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করেছে।

>>নেপালে মাল্টি-মিলিয়ন ডলার কৌশলের মাধ্যমে আইএফসি ক্ষুদ্র ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ এবং পরিবারে অর্থায়ন প্রাপ্যতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়েছে।

>>শ্রীলঙ্কায় ২০২২ অর্থবছরে আইএফসি সহায়তা বাড়িয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সেদেশে ব্রডব্যান্ড কানেকটিভিটির উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে ডায়ালগ এক্সিয়েটা পিএলসিকে ১৫০ মিলিয়ন ডলারের তহবিল প্যাকেজ সংক্রান্ত সর্বশেষ চুক্তি হয়েছে।  

এসআই/এসএম