পাইকারদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সবজি আসে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে। এসব সবজি আড়ত থেকে মাত্র এক হাত বদলি হয়ে রাজধানীর বাজারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে। কারওয়ান ও মহাখালী এবং বাড্ডা এলাকার বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।

সোমবার দিবাগত রাত ১০টায় ঘড়ির কাঁটা পার হতে না হতেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে একের পর এক সবজিভর্তি ট্রাক ঢুকতে দেখা গেছে রাজধানীর এই পাইকারি কাঁচাবাজারে। ট্রাক থামানোর পর পরই মাল খালাস করা হয়। ভ্যানযোগে সবজিগুলো নেওয়া হয় আড়তে। এরপর সেখান থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি দরে সবজি কিনতে শুরু করেন।   

আরও পড়ুন: কারওয়ান বাজার পার হলেই কেজিতে দাম বাড়ে ১৫-২০ টাকা  

বাজারটিতে দেখা দেখা গেছে, বিভিন্ন আড়তে পাইকারিতে পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকা কেজিতে। তার চেয়ে একটু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চিচিঙ্গা। এই সবজিটি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২৫ টাকা কেজিতে। ঢেড়স ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে। একই দরে বিক্রি হয় পটল। কাঁকরোল ও কচুরমুখী বিক্রি হয় ৩০ টাকা কেজিতে।

এদিকে কাঁচামরিচ বিক্রি করতে দেখা গেছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে। এর মধ্যে সাদা কাঁচামরিচ ৯০ টাকা কেজি। কালো ঝাল বেশি কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা কেজিতে। মূলা ৩০ টাকা, করলা ৪৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৫-২৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লাউ আকার ভেদে ২৮-৪০ টাকা। চাল কুমড়া বিক্রি হচ্ছে আকার ভেদে ২৫ থেকে ৩০ টাকা।  

আরেক আলোচিত সবজির মধ্যে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে। এর মধ্যে সাদা গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজিতে। লম্বা কালো বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে। আর বাজারে নতুন আসা লাল গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজিতে।

বাজারে দেশি সবজির মধ্যে সবচেয়ে দামি হলো শসা। দেশি শসা বিক্রি হয় ৬০ টাকা কেজিতে। নতুন সিম বিক্রি হয় ১২০ টাকায়, টমেটো বিক্রি হয় ৯০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা এবং কচুরমুখী ৩০ টাকা বিক্রি হয়েছে কেজিতে।

এছাড়াও দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৬ টাকা কেজিতে। আমদানি পেঁয়াজ ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা, আলু ২২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে কেজিতে। আরেক আলোচিত পণ্য মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা হালিতে। অর্থাৎ ১০০ ডিম বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকায়।

একই পণ্য রাজধানীর মহাখালী ও বাড্ডা বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে। বাজার দুটিতে সব চেয়ে কম দামি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা কেজিতে। অর্থাৎ ১০ থেকে ১২ টাকার পেঁপে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ৯০ টাকার কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০টাকায়। ৩৫ থেকে ৪০ টাকার লম্বা বেগুন বিক্রি হয় ৮০ টাকা কেজিতে। ৬০ টাকার শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়।

একইভাবে কাঁকরোল ৬০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কচুর মোটা লতি ৭০ টাকা, চিকন লতি ৮০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, গাজর ১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাউ ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার ফালি ৩০ টাকা, চাল কুমড়া ৪০ টাকা পিস হিসাবে এবং কাঁচা কলা ৪০ টাকা ও লেবু ২০ থেকে ২৫ টাকা হালি ধরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়াও দেশি ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে। আর ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা হালিতে।

খচুরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবজি কেনা থেকে শুরু করে ‍বিক্রি পর্যন্ত পদে পদে খরচ। এই খরচের কারণেই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। তারা বলেন, আপনারা শুধু পাইকারি বাজারের দামই দেখেন। তারপর ৬ থেকে ৭ ধরনের খরচ দিতে হয়, সেটা তো দেখেন না। আমরা কেজি প্রতি ৩ থেকে ৫ টাকার বেশি লাভ করি না।  

মহাখালীর ব্যবসায়ী আশিকুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আড়ত থেকে সবজি আনতে অনেক হিডেন কস্ট আছে। তিনি বলেন, সবজি নিয়ে আসতে যাতায়াতে চাঁদাসহ ছয় থেকে সাত ধরনের খরচ আছে। এ কারণে পাইকারি বাজারের সাথে খুচরা বাজারের দামের মিল থাকে না।

তিনি আরও বলেন, আমার সাথে একজন কাজের লোক থাকে তার খরচ, লেবার খরচ, যে জাগায় মাল কিনে রাখি সেখানের খরচ, ভ্যান ভাড়া এবং চাঁদাসহ নানা খরচের কারণে পাইকারি বাজারে চেয়ে খুচরা বাজারে দাম বেশি।

বাড্ডার ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন দিপু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগের চেয়ে সবকিছুর দাম বাড়তি। ফলে সবজি একটু কম দামে কিনলেও অনান্য খরচের শেষে কেজি প্রতি কখনো ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি দরে বিক্রি করতে হয়। আমরা তো লোকসান দিয়ে বিক্রি করব না।  

ঝিনাইদহ থেকে ১৫ টন সবজি নিয়ে কারওয়ান বাজারে আসা ট্রাক ড্রাইভার আরিফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, কুষ্টিয়া থেকে আসা যাওয়ায় তার প্রয়োজন ১০০ লিটার ডিজেল। সরকার তেলের দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ট্রিপে খরচ বেড়েছে ৪ হাজার থেকে চার হাজার ২০০ টাকা। এই বাড়তি খরচ বহন করে ব্যবসায়ীরা। আর কিছু অংশ বহন করেন মালিকরা। তাতে ট্রিপ প্রতি ১০ হাজারের জায়গাতে মালিকরা পায় ৮ হাজার থেকে সাড়ে আট হাজার টাকা। অর্থাৎ তাদের দেড় থেকে দুই হাজার টাকা লাভ কমেছে।

কারওয়ান বাজারে ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান আকন্দ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা অল্প লাভ রেখেই সবজি বিক্রি করে দেই। কিন্তু এই সবজি খুচরা বাজারে গেলেই দাম বেড়ে যায়। কী কারণে বাড়ে তা বলতে পারব না। খুচরা বাজারে যে দামে সবজি বিক্রি হয় তা অকল্পনীয়।

এমআই/এমএ