এলডিসি থেকে উত্তরণে স্বল্প সুদে ঋণ পাবে দেশ
স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের সফল উত্তরণের পর বাংলাদেশ স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা পেতে পারে ও ক্রেডিট রেটিংয়ে উন্নতি হবে বলে মনে করছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের স্বীকৃতিতে ডিসিসিআইর এক অভিনন্দন বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ডিসিসিআই মনে করে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির এ আনন্দঘন মুহূর্তে এমন একটি সুখবর আসা সত্যিই সম্মানজনক। করোনা মহামারির সময়ও বর্তমান সরকার দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা ও অর্থনীতির মধ্যে সমন্বয় খুব সফলতার সঙ্গে করতে পেরেছে। এ সময় সরকার করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা-বাণিজ্যের কার্যক্রমকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে অত্যন্ত সময়োপযোগী প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে এবং বেশ সফলভাবে এর বাস্তবায়ন করেছে।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা চেম্বার মনে করে, স্বল্পোন্নত ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশকেই বেশকিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। এলডিসিভুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ২০২৬ সাল পর্যন্ত ইউরোপসহ বেশ কিছু দেশে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পাবে। তবে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশকে আইপিআর এবং ট্রিপস চুক্তির আওতায় শর্তাবলী ও শিল্পের কমপ্লায়েন্স মেনে চলার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। উপরন্তু মধ্যম আয়ের দেশে হিসেবে রফতানি বাজারে অন্যান্য মধ্যম আয়ের দেশের সঙ্গে প্রতিযেগিতার মুখোমুখি হতে হবে।
পাশাপাশি উন্নত দেশগুলো থেকে প্রাপ্ত অগ্রাধিকার ও বিশেষ সুবিধা কমে আসবে, রফতানি বাজারে সম প্রতিযোগিতা বাড়বে, বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমে যাবে এবং ছোট ছোট স্থানীয় শিল্পে সহায়তা কমে আসতে পারে বলে মনে করে ব্যবসায়ীদের সংগঠনটি।
বিজ্ঞাপন
ডিসিসিআই মনে করে, রফতানিমুখী উৎপাদন খাতে এসব চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের ফলে দেশের উৎপাদন খাতেও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে। এলডিসি থেকে বাংলাদেশের সফল উত্তরণের পর দেশ স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা পেতে পারে, ক্রেডিট রেটিংয়ে উন্নতি হবে, বেসরকারি খাত আরও প্রতিযোগী হতে পারবে, উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান বাড়বে এবং কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে বাংলাদেশের আরও দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হবে।
এ অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সংলাপে নিজেদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করতে পারবে। সর্বোপরি শক্তিশালী আইপিআর অবকাঠামো গড়ে তুলতে পারলে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ও আগ্রহ বাড়বে বলে মনে করে সংগঠনটি।
মধ্যম আয়ের দেশে উত্তোরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাণিজ্যিকভাবে সম্ভাবনাময় দেশগুলোর দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি, অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যচুক্তি অথবা আঞ্চলিক বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষর করা, বাণিজ্য মধ্যস্থতায় দক্ষতা অর্জন, ট্রিপস চুক্তির শর্তাবলী বাস্তবায়নের প্রস্তুতি গ্রহণ করা, হাই ভেলু প্রোডাক্ট ডিজাইন ও ইনোভেশন সেন্টার স্থাপন, আন্তর্জাতিক মান স্বীকৃতি গ্রহণে সহায়তা করা, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার বাজার অন্বেষণ, এফডিআই আকর্ষণে সংশ্লিষ্ট নীতিমালা ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, রাজস্ব কাঠামোর অটোমেশন ও আধুনিকায়ন, কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানো, সাপ্লাই চেইন ও লজিস্টিক ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়ানোতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে ঢাকা চেম্বার। এগুলো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্বার্থ সুরক্ষায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে ব্যবসায়ীদের এ সংগঠনটি।
২৭ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভের সুখবর দেন। জাতিসংঘের ডেভেলপমেন্ট পলিসি কমিটি তাদের দ্বিতীয় পর্যালোচনায় বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুপারিশ করেছে।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে তিনটি মূলসূচক- মাথাপিছু আয় (১২৩০ মার্কিন ডলারের বিপরীতে ১৮২৭ মার্কিন ডলার), মানব সম্পদ (৬৬ পয়েন্টের বিপরীতে ৭৫.৩ পয়েন্ট) এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা (৩২ পয়েন্টের চেয়ে কম ২৭ পয়েন্ট) সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
আরএম/এসএসএইচ