ফার্স্ট ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তুহিন রেজা

ডিপোজিট সংগ্রহের বিপরীতে কমিশনের কথা বলে ফার্স্ট ফাইনান্স থেকে ২০২০ ও ২০২১ সালের বিভিন্ন সময়ে সাড়ে ৮২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির এমডিসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে।

দুদক বলছে, কৌশলে ওই টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ফার্স্ট ফাইন্যান্সের অপসারণকৃত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তুহিন রেজা। যার সঙ্গে আরও অন্তত ৫ কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।

অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধানের সুপারিশের প্রেক্ষিতে দুদকের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। 

মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য জানিয়েছে।

অনুমোদিত মামলার আসামিরা হলেন ফার্স্ট ফাইন্যান্সের অপসারণকৃত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তুহিন রেজা, ফার্স্ট ফাইন্যান্সের হেড অব ট্রেজারি ও এসভিপি মোহাম্মদ সবুর খান দিপু, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মোহাম্মদ শাহরুজ্জামান, তানজিমুল মুকতাদির এবং সিনিয়র অফিসার মো. মুকিত হোসেন ও মো. মাইনউদ্দিন।

আরও পড়ুন: অর্থআত্মসাৎ: ফার্স্ট ফাইন্যান্সের এমডিকে জিজ্ঞাসাবাদ

অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ফাইন্যান্সের অপসারণকৃত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তুহিন রেজা টানা দুই বছরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কমিশনের অগ্রিম টাকা উত্তোলন করে গেছেন। অবৈধ ও বেআইনি কমিশন বাণিজ্যের নামে ওই টাকা পুরোটাই আত্মসাৎ করা হয়েছে। এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তুহিন রেজা মোট ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ব্যতিরেকে উন্নয়ন খাত দেখিয়ে উত্তোলন করেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে একক কর্তৃত্বে প্রতিষ্ঠান থেকে ওই টাকা ডিপোজিট সংগ্রহের জন্য অগ্রিম কমিশন হিসেবে উত্তোলন করলেও এর বিপরীতে এক টাকাও ডিপোজিট সংগ্রহ করতে পারেননি তিনি।

প্রতিবেদন সূত্রে আরও জানা যায়, ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেডের অফিসিয়াল ডিপোজিট সংগ্রহের জন্য কমিশন হিসেবে বিভিন্ন সময়ে অগ্রিম হিসাবে ৫০ হাজার, ৫ লাখ, ৭ লাখ, ৮ থেকে ১৬ লাখ টাকা পর্যন্ত উত্তোলন করা হয়েছে। ২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি, ২, ১১, ১২ ও ১৯ মার্চ, ২ জুন ও ৩০ জুলাই এবং ২০২১ সালের ১৮ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১ মার্চ, ৯ মার্চ, ৪ এপ্রিল, ২১ মার্চ ও ২৫ মার্চ কমিশন হিসেবে ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়।

ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেডের ডিপোজিট সংগ্রহের জন্য কমিশন হিসেবে অগ্রিম টাকা উত্তোলনের জন্য প্রতিটি সার্ভিস রিকুয়েস্ট ফর্ম পূরণ থেকে অথরাইজড করা ও কমিশনের টাকা উত্তোলনের অনুমতি পর্যন্ত কাজের নেতৃত্ব দিয়েছেন মো. তুহিন রেজা। যেখানে অন্যান্য আসামিরা প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছেন বলে অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে। এক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদের অনুমতি নেওয়া হয়নি।

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৪০৯, ৪২০, ১০৯ ধারা ও ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগের মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: ফার্স্ট ফাইন্যান্সের লোকসান বেড়েই চলছে

২০২১ সালের ২৮ মার্চ ফার্স্ট ফাইন্যান্সের এমডি তুহিন রেজাকে অপসারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অনিয়ম করে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দুটি গুরুতর অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। একটি হলো তুহিন রেজা ব্যক্তিগত সিআইবি তথ্য গোপন করেন। পরে প্রতিষ্ঠানটির মানবসম্পদ বিভাগে তার নথিতে সিআইবি সংযোজন করা হলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে তা সরিয়ে ফেলেন।

দ্বিতীয় অভিযোগ, কোনো বিজ্ঞপ্তি ও নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়াই একক সিদ্ধান্তে ২২ জন কর্মকর্তা/কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সার্ভিস রুলের ব্যত্যয় ঘটান।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর ফার্স্ট ফাইন্যান্সের এমডি ও সিইও (চলতি দায়িত্ব) হিসেবে তুহিন রেজাকে পদায়ন করা হয়েছিল। পরে ২০২০ সালের ১১ মার্চ ৩১৯তম পর্ষদ সভায় তাকে এমডি নিয়োগ করা হয়। এই নিয়োগের বিষয়ে ওই বছরের ১২ মার্চ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপত্তি চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। ২৫ জুন তা নাকচ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরে ২৮ জুন তুহিন রেজাকে এমডির বিষয়ে পুনরায় অনাপত্তি চায় ফার্স্ট ফাইন্যান্স। তাও নামঞ্জুর করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩ মার্চ তুহিন রেজার এমডি হিসেবে অনাপত্তির অনুমোদন চেয়ে আবেদন করে ফার্স্ট ফাইন্যান্সের পর্ষদ। কিন্তু তা নামঞ্জুর করে ওই বছরের ১৫ মার্চ চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই চিঠিতে দ্রুত নিয়মিত এমডি নিয়োগ দিতে পর্ষদের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

আরএম/এমএ