রানার অটোমোবাইলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. হাফিজুর রহমান খান বলেছেন, আমদানির প্রতি আমার কোনো আগ্রহ নেই। উৎপাদনকে সামনে রেখেই আগাতে চাই। আজকে যে পুরস্কার নিয়ে আসলাম, সেটা তো শিল্পের জন্যই। আরও বেশি অবদান রেখে অটোমোবাইল শিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে চাই।

রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার পাওয়ার পরপরই বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে রানার গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বিশ্বে অটোমোবাইলে প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজার রয়েছে। স্পেয়ার পার্টসের বাজার প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার। এসব বাজারে আমাদের প্রবেশ করতে হবে। যেখানে গার্মেন্টস খাতের মতো প্রসার হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এর জন্য সরকারি সহায়তা প্রয়োজন রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে বন্ডেড ওয়্যার হাউস ও রপ্তানি প্রণোদনার মতো সুবিধা। এর মাধ্যমে অল্প দামে বিশ্ব মার্কেটে প্রবেশ করা সহজ হবে।

বহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে প্রথম পুরস্কার পায় রানার অটোমোবাইলস লিমিটেড ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। শিল্প খাতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এবং বেসরকারি খাতে শিল্প স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার ২০২০’দেওয়া হয়।

হাফিজুর রহমান বলেন, এটা রানার টিমের অর্জন। আমাদের আরও সামনে এগিয়ে যেতে হবে। টিমকে আরও মটিভেটিভ করতে হবে। কিভাবে আরও সামনে আগানো যায়, সেটা ভাবতে হবে। অটো মোবাইল শিল্পে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ প্রচুর। এখন পর্যন্ত যতটুকু প্রসার হয়েছে, সেটা অত্যন্ত অল্প। মটর সাইকেল ম্যানুফেকচারিং শুরু হয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। এখানে ভেনডারের উন্নতি হয়নি। ভেনডারের ডেফেলপমেন্ট হওয়া মানেই শিল্পের অগ্রগতি সূচিত হওয়া। এ উদ্যোগটা আমাদেরই নিতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা মটর সাইকেলের পরে থ্রি হুইলারের প্রোডকশন শুরু করেছি। আগামী ফেব্রুয়ারিতে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে। আমাদের প্রোডাকশন শুরু হয়ে গেছে। আমাদের অর্জনের মধ্যে রয়েছে রপ্তানি। আমরা বাজাজের প্রযুক্তিগত সহায়তায় মেইড ইন বাংলাদেশ ব্রান্ডে থ্রি হুইলার বাজারে আসবে। এরপর আমরা ইলেকট্রিক ভেইক্যাল উৎপাদনের সকল প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এটুআই’য়ের সঙ্গে একটি এমওইউ সই করেছি। তারা টেকনিক্যাল সহায়তা দিচ্ছে। আমরা ইলেকট্রিক্যাল ভেইক্যালের নীতিমালার জন্য অপেক্ষা করছি। শিগগিরই নীতিমালা চূড়ান্ত হবে। সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়গুলোর আন্তরিকতা রয়েছে। শিগগিরই ইলেকট্রিক ভেইক্যাল বাজার নিয়ে আসবে রানার।

এক প্রশ্নের জবাবে শিল্প উদ্যোক্তা হাফিজুর বলেন, আমি আমদানির বিষয়ে নজর দেই না। আমদানি করলে তো যে কোনো সময় করা যায়। আমি ম্যানুফেকচারিং নিয়ে আসতে আগ্রহী, আমদানির প্রতি আমার কোনো আগ্রহ নেই। তবে যদি কোনো কোম্পানি আমদানি দিয়ে শুরু করার পর উৎপাদনের দিকে যায়, সেটা সাধুবাদ যোগ্য। আমি উৎপাদনকে সামনে রেখেই আগাতে চাই। আজকে যে পুরস্কার নিয়ে আসলাম, সেটা তো শিল্পের জন্যই। আমদানিতে অবদানের জন্য দেওয়া হয়নি। শিল্পে উৎসাহিত করার জন্য আজ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আমি আরও বেশি অবদান রাখবো। অটো মোবাইল শিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবো।

তিনি আরও বলেন, আমি কিন্তু দেশের বাজারের মধ্যে থাকতে চাচ্ছি না। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় তিন ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের অটো মোবাইলের বাজার রয়েছে। স্পেয়ার পার্টসের বাজার প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার। এসব বাজারে আমাদের প্রবেশ করতে হবে। এটা এতো বড় বাজার, গার্মেন্টসের মতো প্রসার হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এটার জন্য সরকারি সহায়তা প্রয়োজন রয়েছে।  বন্ডেড ওয়্যার হাউস, যেটা গার্মেন্টসের রয়েছে। এটার জন্য আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আর একটি বিষয় হচ্ছে রপ্তানি প্রণোদনা। তার জন্য সরকারের বেশি খরচ হবে না। প্রথম দুই বছরে ২০ শতাংশ প্রণোদনা চাচ্ছিলাম, পরে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা যেতে পারে। তবে আমরা অল্প দামে বিশ্ব মার্কেটে প্রবেশ করতে পারবো। কারণ আমাদের প্রধান প্রতিযোগী চীন। তাদেরকে টেক্কা দিতে হলে কম দামে পণ্য বিক্রি করতে পারবো।

শিল্পের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানতে চাইলে রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, একটি শিল্পকে দাঁড়াতে হলে চ্যালেঞ্জ থাকবে এটা স্বাভাবিক। ছোট থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে ধাপে এক ধরনের চ্যালঞ্জ থাকবে। অর্থনৈতিক উন্নতির সাথে সাথে ওই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করেই সামনের দিকে যাচ্ছি। যেমন আজ থেকে ৫ বছর আগে অটো মোবাইল পলিসি ছিল না। ওই সময়ে গাড়ি উৎপাদনে প্রণোদনার ব্যবস্থা ছিল না। এখন প্রণোদনা আসছে, ভ্যাট-ট্যাক্সের সুবিধা আসছে। এমনকি (ইলেকট্রিক) রেজিস্ট্রেশনেও বাড়তি সুবিধা থাকবে। পুরো শিল্প দাঁড়াতে সময় লাগবে। যত সময় যাবে, ততই প্রতিবন্ধকতা দূর হবে।

তিনি বলেন, ইলেট্রিক্যাল ভেইক্যাল দিয়ে প্যাসেঞ্জার গাড়ির যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে। সরকার যে অটো মোবাইল নীতিমালা ঘোষণা করেছে, সেখানে দেশীয় উদ্যোক্তাদের জন্য নগদ প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। মটর সাইকেল যেভাবে ধাপে ধাপে এগিয়েছে, ইলেকট্রিক্যাল গাড়ির বিষয়টিও ধাপে ধাপে এগিয়ে যাবে। রিকন্ডিশন গাড়ির ব্যবহার যখনই সীমিত হয়ে আসবে, তখনেই নতুন গাড়ি আমদানি ও উৎপাদনের দরজা উন্মুক্ত হবে।

আরএম/কেএ