রাজধানীসহ সারা দেশেই শীতের ব্যাপক আধিপত্য চলছে। সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া থেকে শুরু করে ঠান্ডাজনিত নানা রোগে হাসপাতালগুলো রোগীতে ভরপুর। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণত মানুষ শীতল জিনিস থেকে দূরে থাকে। তবে যারা আইসক্রিমপ্রেমী, হাড় কাঁপানো শীতও কি তাদের থামিয়ে রাখতে পারে?

শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) রাজধানীর পূর্বাচলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় আইসক্রিম স্টলগুলোতে আইসক্রিমপ্রেমীদের ভিড় দেখা গেছে।

আইসক্রিম খেতে আসা কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, যারা আইসক্রিম খেতে ভালোবাসেন, আইসক্রিম দেখে শীতকালেও তারা লোভ সামলাতে পারেন না। এটা অনেকটা যেন বিষে বিষক্ষয়ের মতো।

বেসরকারি চাকরিজীবী সাদ বলেন, আমি মনে করি না ঠান্ডায় আইসক্রিম খেলে ঠান্ডা বাড়ে। বরং শুনেছি সাময়িক ঠান্ডা কমে। আমি যখন আইসক্রিমটা খাব, আমার দেহে শীতের তাপমাত্রা এমনিতেই নামতে শুরু করবে।

তিনি বলেন, বড় কথা হলো আইসক্রিম খেতে ভালো লাগে, এখনও খাচ্ছি মজার জন্যই। মেলায় ঢুকেই আইসক্রিম কিনেছি। খাবো আর মেলায় ঘুরব।

রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে মেলায় ঘুরতে আসা খসরু মাহমুদ বলেন, বাইরে ঠান্ডা থাকলেও ভেতরে এতোটা ঠান্ডা নেই। ভেতরে তো অনেক মানুষ, তাছাড়া হাঁটতে হাঁটতে গরম লেগে গেছে, তাই ভাবলাম আইসক্রিম কিনে খাই। তাছাড়া যারা আইসক্রিম ভালোবাসে তাদের কাছে শীত আর গরম নেই, তারা সবসময়ই আইসক্রিম খায়।

নিজেও আইসক্রিম খাচ্ছেন, বাচ্চাদেরও কিনে দিয়েছেন গাজীপুর থেকে মেলায় আসা ডা. মোতালেব হোসেন অন্তর। শীতে বাচ্চাদের আইসক্রিম কিনে দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওদের আসলে কমন এলার্জি বা কমন কোল্ডটা নেই। যে কারণে আইসক্রিম খেতে খুব বেশি সমস্যা মনে করছি না।

তিনি বলেন, সবসময় আসলে পরিবারসহ এভাবে বের হওয়া হয় না। দীর্ঘদিন পর পরিবারসহ মেলায় ঘুরতে এসেছি, এতে করে বাচ্চাদের মধ্যে, নিজের মধ্যে যে ভালো লাগা কাজ করছে, এর তুলনায় অল্পস্বল্প ঠান্ডা কোনো ব্যাপারই না।

সেভয় আইসক্রিম লিমিটেডের বিক্রয়কর্মী সেলিনা বলেন, শীতের সময় হলেও মেলায় আইসক্রিম বিক্রি অনেক ভালো হচ্ছে। মেলায় তো অনেক মানুষ হাটাহাটি করছে, ভেতরে কোনো ঠান্ডা নেই। এ অবস্থায় আইসক্রিম খেতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, সাধারণত আমরা মনে করি আইসক্রিম খেলে ঠান্ডা লাগে, কিন্তু ব্যাপারটি তা নয়। আইসক্রিম খাওয়ার পর এক গ্লাস নরমাল পানি খেলে ঠান্ডার কোনো সমস্যা হয় না। আইসক্রিমের মধ্যে কিছু উপাদান আছে যা শরীরকে গরম রাখে। সবমিলিয়ে মানুষ সানন্দেই আইসক্রিম কিনতে আসছে এবং খাচ্ছে।

ছুটির দিন হওয়ায় শুক্রবার সকাল থেকেই মেলা প্রাঙ্গণে আসতে থাকেন দর্শনার্থীরা। আর সন্ধ্যা হতে না হতেই মেলা প্রাঙ্গণ ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে। মেলায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দেখে শুনে পছন্দের পণ্যটি কিনতে ব্যস্ত ক্রেতারা। ক্রেতা সামলাতে ব্যস্ত স্টল ও প্যাভিলিয়নের বিক্রেতারা। ছুটির দিনকে কেন্দ্র করে স্টলগুলোতে রয়েছে নানা ছাড়ের সমাহার।

এবার ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ১০টি দেশের ১৭টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে। তবে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলবে। এবার মেলায় প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। মেলার টিকিট অনলাইনে ক্রয় করলে ৫০ শতাংশ ছাড়ের সুযোগ থাকবে।

এছাড়াও মেলায় প্রায় এক হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থাসহ বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য ১৭টি প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন ও স্টল রয়েছে। দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য দুটি হলের বাইরে মিলে মোট ৩৩১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে।

টিআই/এসএসএইচ/