বাংলাদেশ থেকে চাইলে যে কেউ বিদেশে টাকা পাচার করতে পারে। কীভাবে পাঠায় আপনারাও ভালো জানেন। আর মন্ত্রী হিসেবে দায় আমিও এড়াতে পারি না। এর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে।

সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রাজস্ব সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনে ‘কাস্টমস এর আধুনিকায়ন ও সংস্কার : ডিজিটাল কাস্টমস হতে স্মার্ট কাস্টমস’ শীর্ষক সেমিনারে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এসব কথা বলেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ করতে হবে। বহু টাকা এ দেশ থেকে কানাডার বেগমপাড়া, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে চলে যাচ্ছে। যে কেউ চাইলে বিদেশে টাকা পাচার করতে পারে। কীভাবে পাঠায় আপনারা ভালো জানেন। আমিও মন্ত্রী হিসেবে দায় এড়াতে পারি না। কঠোরভাবে পলিসির বাস্তবায়ন করতে হবে। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে। আন্ডার ইন ভয়েস, ওভার ইন ভয়েসসহ নানাভাবে যে কেউ চাইলেই খুব সহজেই বিদেশে টাকা পাঠাতে পারে। এক্ষেত্রে রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে।

রাজস্ব আরও বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, আগের তুলনায় রাজস্ব অনেক বেড়েছে, কিন্তু রাজস্ব-জিডিপি অনুপাতে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি। এটিকে আরও বাড়ানো উচিত। বিশেষ করে আয়করে আমরা এখনো সফল হতে পারিনি। সেজন্য রাজস্ব বিভাগের সক্ষমতা ও দক্ষতা আরও বাড়াতে হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত ১৪ বছরে অর্থনীতি, কৃষি, যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব ক্ষেত্রে দেশের যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, সারা বিশ্ব তার স্বীকৃতি দিচ্ছে, প্রশংসা করছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের প্রশংসা করছে। সেখানে দেশের ভেতরে কেউ কেউ এ নিয়ে প্রশ্ন তোলে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। জাতি হিসেবে আমাদের আত্মসম্মানবোধ থাকা উচিত।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন। পৃথক দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম কাস্টমস ও বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার মাহবুবুর রহমান ও চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার ফাইজুর রহমান।

প্রবন্ধে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফয়জুর রহমান বলেন, স্বয়ংক্রিয়, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তি নির্ভর এবং নিরাপদ কাস্টমস মিলেই স্মার্ট কাস্টমস। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পণ্য, পরিবহন ও যাত্রীদের কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের ক্ষেত্রে একদিকে সময় ও খরচ উল্লেখযোগ্যহারে কমানো সম্ভব। এছাড়া কার্যকর নিয়ন্ত্রণ স্থাপনের মাধ্যমে ব্যবসাবান্ধব নিরাপদ বাণিজ্য পরিবেশ নিশ্চিত হবে।

তিনি বলেন, কাস্টমস ইনফরমেশন সিস্টেম (সিআইএস) থেকে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড, বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো, বন্ড অটোমেশন, কন্টেইনার স্ক্যানার স্থাপন (বর্তমানে ৩০টি), ই-অকশন সংস্কার ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে কাস্টমস তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অবকাঠামো, লজিস্টিকস সাপোর্ট ও জনবল। তবে মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে— ২০২৫ থেকে ২০২৭ সময়ের মধ্যে ট্যারিফ পলিসি ও কর অব্যাহতি যৌক্তিককরণ, ট্যাক্স-গ্যাপ অ্যানালাইসিস ও বিদ্যমান অর্গানোগ্রাম হালনাগাদ। আর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে— ২০২৮ থেকে ২০৩২ সময়ের মধ্যে এনবিআরের সব উইংয়ের মধ্যে কার্যকর সমন্বয়সহ ডিজিটাল ইন্টিগ্রেশন নিশ্চিত করা।

আরএম/এসএসএইচ/