করোনা মহামারির কারণে শপিং মল বা মার্কেটগুলোতে দুই বছর ঈদকেন্দ্রিক বেচাকেনা ছিল হতাশাজনক। তবে করোনার প্রকোপ কমায় গত বছর থেকে ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসায় ঘুরে দাঁড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গত বছরের ধারাবাহিকতায় এবার আরও বেশি ব্যবসার প্রত্যাশা করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে গত বছরগুলোর তুলনায় জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ায় ঈদের কেনাকাটা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন অনেক ক্রেতা। তারা বলছেন, গত এক বছরে যেভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে, সেভাবে আয় বাড়েনি। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের জন্য এবারের ঈদ মোটেও স্বস্তির হবে না।
 
রাজধানীর মিরপুরের বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ উপলক্ষ্যে এখনও বেচাকেনা জমে ওঠেনি। তবে মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি একটু একটু করে বাড়ছে। তাই নতুন পোশাকের পসরা সাজিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় আছেন তারা। ব্যবসায়ীদের দাবি, ১৫ থেকে ২০ রোজার পরই ক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়বে। সেজন্য প্রতিদিনই নতুন নতুন পোশাক দোকানে সাজানো হচ্ছে।

মিরপুর-১ নম্বরের নিউ মার্কেট, মিরপুর শপিং সেন্টার, মুক্তিযোদ্ধা শপিং কমপ্লেক্স, সনি সিনেমা হল শপিং মল, মিরপুর-১ নম্বরের কান্ট্রি বয় ও ইয়েলো, মিরপুর-১০ নম্বরের শাহ আলী মার্কেট, মিরপুর-১১ নম্বরের বিভিন্ন মার্কেট এবং মিরপুর-১২ নম্বরের প্রিন্স বাজারসহ ভাসমান মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ উপলক্ষ্যে সপ্তাহের বাকি দিনগুলোর তুলনায় ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার মার্কেটগুলোতে লোকজনের কিছুটা সমাগম হচ্ছে। তবে বেচাকেনা জমেনি। শপিং মলগুলোতেও ক্রেতাদের ভিড় সেভাবে বাড়েনি।

সরেজমিন দেখা গেছে, মিরপুর-১২ নম্বরের প্রিন্স বাজারে সব বয়সী ক্রেতাদের জন্য বাহারি পোশাক সাজানো হয়েছে। শপিং মলটিতে আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে প্রতিদিনই পুরুষদের জন্য বাহারি ডিজাইনের পাঞ্জাবি তোলা হচ্ছে। পাশাপাশি বাচ্চাদের ও নারীদের আইটেমের বিভিন্ন পোশাকও নজড় কাড়ছে। ক্রেতা টানতে কোনো ধরনের পোশাকেরই কমতি রাখছে না প্রিন্স বাজার কর্তৃপক্ষ।  
 
মিরপুর-১১ নম্বরের একটি মার্কেটের ব্যবসায়ী আবদুল খালেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের খোলা মার্কেটের ব্যবসা একটু একটু করে জমে উঠেছে। নারী-পুরুষসহ ছোটদের পোশাক বিক্রি হচ্ছে। ২০ রোজার পর থেকে ক্রেতার ভিড় আরো বাড়বে। ছোটদের ও বড়দের পাঞ্জাবি, নারীদের থ্রি পিচ এবং শাড়ি বিক্রি হচ্ছে।’

মিরপুর-১১ নম্বরে সুলেমান নামের এক ক্রেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ঈদে মার্কেটে চাপ বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। এজন্য পরিবারের সদস্যদের জন্য আগেভাগে কেনাকাটা করে ফেলছি। গতবার মিরপুর শপিং সেন্টার থেকে কেনাকাটা করলেও এবার আর শপিং সেন্টার থেকে কেনা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, গত বছরের তুলনায় পরিবারের দৈনন্দিন খরচ অনেক বেড়েছে। কিন্তু বেতন এক টাকাও বাড়েনি। এজন্য এখান থেকে কেনাকাটা করছি। এখানে জিনিসের দাম তুলনামূলক কম, আবার দামাদামি করে কেনা যায়।’  

মিরপুর-২ নম্বরে শতরূপা বস্ত্র বিতানের বিক্রেতা মাহমুদ হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের এই মার্কেটে এখনও ঈদকেন্দ্রিক বেচাকেনা জমে ওঠেনি। সাধারণ সময়ের মতোই বেচাকেনা হচ্ছে। তবে গত শুক্রবার বেচাকেনা একটু বেশি ছিল। আমাদের এই মার্কেটে সবসময়ই ২০ রমজানের পর বেচাকেনা জমে ওঠে। তবে এখন যা বিক্রি হচ্ছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে বাচ্চাদের পোশাক। বয়স্কদের পোশাক রমজানের শেষের দিকে বিক্রি হয়। এর আগে করোনার কারণে গত দুই বছর ব্যবসা হয়নি। তবে গত বছর ব্যবসা ভালো হয়েছিল। এবার ক্রেতাদের নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। সেজন্য সব শ্রেণির ক্রেতাদের জন্য পোশাক তুলেছি। প্রত্যেক দিনই নতুন নতুন পোশাক দোকানে সাজানো হচ্ছে।’

রূপনগর থেকে মিরপুর শপিং সেন্টারে কেনাকাটা করতে আসা স্বপন চাকরি করেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষ্যে প্রতিবারই পরিবারের জন্য কেনাকাটা করতে হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এবার ঈদেও কেনাকাটা করতে এসেছি। তবে আজ আপাতত আমার বাচ্চার জন্য কেনাকাটা করলাম। আমাদের জন্য কেনাকাটা কয়েকদিন পরে করবো। এবার লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো গতবারের তুলনায় এবার পোশাকের দাম অনেক বেশি।’

মিরপুর-১ নম্বরের নিউ মার্কেটে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানেই নতুন নতুন পোশাক ওঠানো হয়েছে। নিউ মার্কেটের দোকানিরা জানান, প্রত্যেক দোকানে পাঞ্জাবি, পায়জামা, টি-শার্ট, প্যান্ট, থ্রি পিচ, শাড়ি, লেহেঙ্গা, বোরকার নতুন নতুন কালেকশন জড়ো করা হচ্ছে। এখনও মিরপুরের নিউ মার্কেটে বেচাকেনা সেভাবে শুরু না হলেও ক্রেতারা আসছেন এবং দেখছেন।

মিরপুর-১ নম্বরের কান্ট্রি বয়ে নতুন নতুন পোশাকের পসরা সাজানো হয়েছে। কান্ট্রি বয়ে পাঞ্জাবি, পায়জামা, টি-শার্ট, প্যান্ট, থ্রি পিচ, শাড়ি, জুতা, কেডস, কোমরের বেল্টসহ যাবতীয় পণ্য পাওয়া যায়। ঈদ উপলক্ষ্যে কন্ট্রি বয়েও ক্রেতায় জমজমাট থাকে। বিশেষ করে রোজার ঈদে নতুন নতুন কালেকশনে ক্রেতা সমাগম অনেক বাড়ে বলে জানিয়েছেন কান্ট্রি বয়ের বিক্রয়কর্মী সৈকত।

ওই বিক্রয়কর্মী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সব মিলিয়ে এবারের ঈদে আমাদের কালেকশন অনেক। বাচ্চাদের থেকে শুরু করে নারী-পুরুষের পাশাপাশি বয়স্কদের জন্যও বাহারি সব কালেকশন রয়েছে। আমরা আশা করছি, ক্রেতারা এলে পছন্দের পোশাক কিনতে পারবেন আমাদের দোকান থেকে।’

মিরপুর-১ নম্বরের ইয়েলো আউটলেটের বিক্রয়কর্মী সোয়েব ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের আউটলেটে সবসময়ই ক্রেতা সমাগম থাকে। তবে আসছে ঈদকে সামনে রেখে প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন পোশাক আনা হচ্ছে। প্রতিবারই রোজার ঈদে আমাদের আউটলেটে কাস্টমারে ভরপুর থাকে। এবারও আশা করছি ভালো ক্রেতা পাওয়া যাবে। তবে রোজার মাঝামাঝিতে আমাদের বেচাকেনা বাড়তে থাকে। যা চলে একদম চাঁদরাত পর্যন্ত।

এসআর/জেডএস