ঈদ মার্কেটে নারী ক্রেতার আধিক্য, শাড়ি-পাঞ্জাবিতেই টানাটানি
ঈদের বাকি আর মাত্র দুই থেকে তিনদিন। রমজানের শেষ এ বেলায় প্রচণ্ড গরমকে উপেক্ষা করে রাজধানীর মার্কেট ও শপিং মলগুলোতে নারী ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। মার্কেটে আসা ক্রেতারা শাড়ি, থ্রি-পিস, বোরকা, পায়জামা-পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্ট, টি-শার্ট এবং গামছা-লুঙ্গীসহ নতুন নতুন জামাকাপড় কিনছেন।
তবে ক্রেতারা মার্কেটে সবচেয়ে বেশি কিনছেন শাড়ি। ৮০০ থেকে ২০০০ টাকা দামের মধ্যে সূতি শাড়ি সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। তারপরেই বিক্রি হচ্ছে পায়জামা-পাঞ্জাবি। ৬০০ থেকে ১০০০ টাকার দামের পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে বেশি। আর পায়জামা বা ট্রাউজার বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকায়।
বিজ্ঞাপন
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকার পায়জামা-পাঞ্জাবির প্যাকেজ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
রাজধানীর মৌচাকের আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের মাতৃভূমি নামের এক দোকানের বিক্রেতা সাজেদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার গত বছরের চেয়ে বেচাকেনা ভালো। ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি পছন্দের পাঞ্জাবি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা দরের।
তিনি বলেন, আমাদের দোকানে ৫ হাজার টাকা দামের পাঞ্জাবি রয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১০০০ কিংবা ১২০০ টাকার দামের পাঞ্জাবি। কারণ এখানে যারাই আসেন বেশিরভাগই মধ্য আয়ের মানুষ। তাদের বেশিরভাগেরই বাজেট ৬০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে। আর যারা পার্টি কিংবা গিফটের জন্য পাঞ্জাবি কিনছেন তারা দেড় হাজার কিংবা ২ হাজার টাকা দামের পাঞ্জাবি নিচ্ছেন।
শাহজানপুর থেকে কেনাকাটা করতে আসা রইসুল ইসলাম জীবন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাঞ্জাবির দাম এবার অনেক বেশি। গত বছরের চেয়ে প্রতি পাঞ্জাবিতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দাম বেশি। তাই দুই ছেলের জন্য পাঞ্জাবি কিনেছি ১৮০০ টাকায়। গত বছর ১৩০০ টাকায় কিনেছিলাম।
একই কথা জানালেন শান্তিনগর থেকে ঈদ মার্কেটে আসা সোফিয়া আক্তার মিতু। তিনি বলেন, এখানে আমার পরিচিত দুটি দোকান আছে। প্রতিবছর এখান থেকে পাঞ্জাবি নেই। এবারও আসছি, কিন্তু পাঞ্জাবির দাম অনেক বেশি চাচ্ছে। তাই ঘুরে দেখছি।
রাজধানীর মৌচাকের ফরচুন শপিং মলের প্রিয়া প্রিন্টের দোকানদার সজিব। তিনি বলেন, দুপুরে কিংবা বিকেলে বেচা-কেনা কম হয়। তবে সন্ধ্যার পর বিক্রি বাড়ে। ইফতার করে তারপর কেনাকাটা করতে আসেন ক্রেতারা।
তিনি বলেন, এ বছর পার্টি শাড়ি বিক্রি একেবারে নেই বললেই চলে। এমনকি দামি কাতান শাড়িও বিক্রি হচ্ছে কম। সূতি শাড়ি বিক্রি হচ্ছে বেশি। দাম হিসেবে ৮শ থেকে দেড় হাজার কিংবা ১৮‘শ টাকার শাড়ি বিক্রি হচ্ছে বেশি।
মা, স্ত্রী, বোন এবং শাশুড়ির জন্য শাড়ি কিনতে আসা রিপন হাওলাদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাল-ডাল তেল নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতেই সব টাকা শেষ। তারপরও যেহেতু এটা ঈদ উল ফিতর তাই সবার জন্য কাপড় কিনতে হয়। কিন্তু কাপড়ের যে চড়া দাম তাতে কেনাকাটায় দায় হয়ে পড়েছে। গত বছর যে শাড়ি কিনেছি ১২০০ টাকায় এবার সেই শাড়ির দাম ১৬০০ টাকার নিচে নামছে না। এখন বলুন এই দামের যদি চারটি শাড়ি নেই তাহলে আমার কত টাকা যাবে, আমার কী এই বছর ইনকাম বাড়ছে।
একই মার্কেটের নিশাত পাঞ্জাবি ফ্যাশন থেকে ছেলে আর মেয়ের জামাইয়ের জন্য পাঞ্জাবি কিনেছেন ক্রেতা জহিরুল ইসলাম জনি। তিনি বলেন, পাঞ্জাবি কিনতে হবে ৫টি। ছেলে ও মেয়ের জামাইয়ের জন্য পাঞ্জাবি কিনেই বাজেট শেষ তাই চলে যাচ্ছি। দেখি কাল কিংবা পরশু দিন কিনবো।
বাড্ডার হল্যান্ড মার্কেটে মেয়েকে নিয়ে আসা মরিয়ম বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজকে বেতন পাইছি। শাড়ি কিনতে আসছি, দাম করছি ১৫০০ টাকা চায়। আমি ৪০০ টাকা কইছি, দিচ্ছে না। দেহি ৫০০ টাকা হলে নিমু। আর একটা রেডিমেট থ্রি-পিস কিনমু।
মার্কেটের তানিয়া শাড়ি ফ্যাশনের মালিক সাদ্দাম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, টুকটাক বিক্রি হচ্ছে। যেরকম প্রত্যাশা করেছি সে রকম বিক্রি হচ্ছে না।
তিনি জানান, রমজানের শুরু থেকেই বিক্রি কম। এছাড়া এবার ঈদের আগে লম্বা ছুটি পড়ছে ফলে সবাই বাড়ি চলে যাচ্ছে, কেনাকাটা কম করছে। তারপরও দুই-তিনদিন বাকি আছে। আশা করছি ভালোই হবে।
পাশের দোকানদার আফিুর রহমান পাশা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের মার্কেটে নারী কাস্টমার বেশি। তারা শাড়িই বেশি কিনছেন। যারা আসছেন তারা ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা দামে শাড়ি কিনছেন।
এমআই/এমজে