বৈধ পথে ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আনতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছে না। গেল মে মাসে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৬৯ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। যা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ কম।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাতে বেশি পছন্দ করেন। খোলাবাজারের তুলনায় ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দাম কম দেওয়া হয়। পাশাপাশি ব্যাংকে যাওয়া ও লাইনে দাঁড়ানোর কোনো ঝামেলা নেই হুন্ডিতে। বাড়িতে এসে টাকা পৌঁছে দেয় তারা। তাই গ্রাহকদের কাছে ব্যাংকের চেয়ে হুন্ডিই বেশি জনপ্রিয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, সদ্যবিদায়ী মে মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে ১৬৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। আগের বছরের মে মাসে ১৮৮ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এর আগে ঈদের মাস এপ্রিলেও প্রবাসী আয় কম এসেছিল। ওই মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৬৮ কোটি ডলার। ২০২২ সালের এপ্রিলে যার পরিমাণ ছিল ২ বিলিয়নের ওপরে।

প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২৮ কোটি ৮৬ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ কোটি ৯৯ লাখ ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৩৩ কোটি ৬২ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৬৮ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

মে মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বরাবরের মতো ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। আলোচিত সময় ব্যাংকটির মাধ্যমে এসেছে ২২ কোটি ডলার। এরপর অগ্রণী ব্যাংকে ১১ কোটি ৭০ লাখ, জনতা ব্যাংকে ৮ কোটি ৫ লাখ ডলার, ডাচ্–বাংলা ব্যাংকে ৭ কোটি ৫০ লাখ এবং আল-আরাফা ব্যাংকের মাধ্যমে ৬ কোটি ৯৬ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছে।

আলোচিত সময়ে সরকারি বিডিবিএল, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, পু‌লি‌শের কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেন, বিদেশি হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে কোন রেমিটেন্স আসেনি।

২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই ও আগস্ট) টানা দুই বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। কিন্তু, সেপ্টেম্বর থেকে টানা ছয় মাস দেড় বিলিয়ন ডলারের ঘরেই ঘুরপাক খায় রেমিট্যান্স প্রবাহ। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই) এসেছিল ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, আগস্টে এসেছিল ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ মার্কিন ডলার, অক্টোবরে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, ডিসেম্বরে ১৬৯ কোটি ৯৬ লাখ মার্কিন ডলার, জানুয়ারি মাসে আসে ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ১৫৬ কোটি ১২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আর স্বাধীনতার মাস মার্চে এসেছে ২০১ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। আর এপ্রিল মাসে এসেছিল ১৬৮ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স।

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম (জুলাই থেকে মে পর্যন্ত) ১১ মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৯৪১ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৯১৯ কোটি ৪৪ লাখ ডলার।

বিদায়ী ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার।

রেমিট্যান্স বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বশেষ সেবার বিনিময়ে দেশে রেমিট্যান্স আয় আনতে ফরম সি পূরণ করার শর্ত শিথিল করা হয়। পাশাপাশি সেবা খাতের উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকদের ঘোষণা ছাড়াই ২০ হাজার মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

রেমিট্যান্স বাড়াতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে

বৈধ উপায়ে ওয়েজ আর্নার্স রেমিট্যান্সের বিপরীতে আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা, রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের সিআইপি সম্মাননা দেওয়া, রেমিট্যান্স বিতরণ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও সহজ করার পাশাপাশি অনিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ন অর্থায়ন সুবিধা দেওয়া, ফিনটেক পদ্ধতির আওতায় আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অপারেটরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ড্রয়িং ব্যবস্থা স্থাপনে উদ্বুদ্ধ করা এবং রেমিট্যান্স পাঠাতে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর চার্জ মওকুফ করা হয়েছে।

এসআই/এমজে