দেশে ৪৩৫টি জর্দা কারখানা ও  ৪৮টি গুল কারখানা থাকলেও কর প্রদান করে মাত্র ২১৮টি কারখানা। অর্থাৎ প্রায় ৫৫ শতাংশ করখানা কর ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে। আবার ৩৩ শতাংশের নেই বৈধ ট্রেড লাইসেন্স।

সম্প্রতি পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে আসে। ‘ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকারীদের করজালের বাইরে থাকার কারণ এবং এক্ষেত্রে করণীয়’ শীর্ষক গবেষণাটি পরিচালনা করে ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে)।

সোমবার (৫ এপ্রিল) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে তামাকবিরোধী সংগঠন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, উবিনীগ, ভয়েস এবং প্রজ্ঞার সঙ্গে আয়োজিত ওয়েবিনার গবেষণার তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

গবেষক দলের প্রধান ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন। ফলাফলে দেখা গেছে, দেশে ৪৩৫টি জর্দা কারখানা এবং ৪৮টি গুল কারখানার মধ্যে মাত্র ২১৮টি জর্দা ও গুল কারখানা কর প্রদান করে। ৮টি বিভাগের ২৯টি জেলায় করজালের বাইরে থাকা ৮৮ জন ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকারীর (৮১ জর্দা এবং ৭ গুল) মধ্যে ৩৩ শতাংশের ট্রেড লাইসেন্স নেই। ৯১ শতাংশ উৎপাদনকারী যন্ত্রের সাহায্য ব্যতীত হাতে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদন করেন। সাধারণত বাড়িতে বা ক্ষুদ্র পরিসরে কারখানায় এসব তামাকপণ্য উৎপাদিত হয়। এসব কারখানায় মাসিক গ্রস টার্নওভারের পরিমাণ ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

গবেষণা প্রতিবেদনে, অনানুষ্ঠানিক উপায়ে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকেই ট্যাক্স কমপ্লায়েন্সের অন্যতম বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এছাড়াও এনবিআরের দক্ষ জনবলের সংকট, মাঠ পর্যায়ের অবকাঠামো এবং সনাতন সরঞ্জাম ও পদ্ধতি এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছ। আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় ট্যাক্স রিটার্ন ব্যবস্থার অনুপস্থিতি এবং শক্তিশালী ট্র্যাকিং ও ট্রেসিং পদ্ধতির অভাবে এ খাতে উৎপাদনকারীরা কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ পান।

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনবিআর সদস্য (মূসক নিরীক্ষা ও গোয়েন্দা) জাকিয়া সুলতানা বলেন, শুধু রাজস্ব নয়, জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ব্যবহার কমলে স্বাস্থ্যখাতে খরচ কমে যাবে।

গবেষণায় জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের কর পদ্ধতি সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের মধ্যে মূল্য পার্থক্য কমিয়ে সহজলভ্যতা হ্রাস করার সুপারিশও করা হয়েছে।

ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) বাংলাদেশের লিড পলিসি অ্যাডভাইজর এবং বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান। আলোচনা পর্বে অংশ নেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের (সিটিএফকে) রিসার্চ ডিরেক্টর মারিয়া জি. কারমোনা ও সাউথ এশিয়া প্রোগ্রামস ডিরেক্টর বন্দনা শাহ প্রমুখ।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠির মধ্যে ২০.৬ শতাংশ  মানুষ (২ কোটি ২০ লাখ) এবং ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী বিদ্যালয়গামী শিশুদের ৪.৫ শতাংশ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ৩০.৬ কোটি টাকা যা মোট তামাক রাজস্বের মাত্র ০.১২ শতাংশ। ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এবং মুখ গহ্বরসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী।

আরএম/এসকেডি